মাইক থাকবে নির্দিষ্ট সময়, পোস্টারেও বিধি-নিষেধ

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা যাতে নির্বাচন বিধি মেনে চলেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2015, 05:19 AM
Updated : 28 March 2015, 08:17 AM

প্রচারণা শুরুর আগে প্রয়োজনে প্রার্থীদের ডেকে বিধিনিষেধ এবং আচরণ বিধি লংঘনের শাস্তির বিষয়ে অবহিত করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে বলে ইসির উপ সচিব সামসুল আলম জানিয়েছেন।

আচরণ বিধি লংঘনে জেল-জরিমানা ছাড়াও প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিদিন দিনে সাত ঘণ্টা মাইক ব্যবহার করতে পারবেন প্রার্থীরা। ওয়ার্ড প্রতি সর্বোচ্চ দুটি মাইক ব্যবহার করা যাবে। পোস্টার তৈরিতেও থাকছে নানা বিধি-নিষেধ।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট হবে।

গত নয় দিন ধরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন প্রার্থীরা। রোববার শেষ হচ্ছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়। যাচাই-বাছাই শেষে ৯ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরোলে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রচারণায় নামবেন প্রার্থীরা। ২৬ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচারণার সুযোগ রয়েছে।

এরইমধ্যে ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে পুরো মাসজুড়ে চলবে এইচএসসি পরীক্ষা।

নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা সামসুল আলম বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরই প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে সতর্ক করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ও মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, মনোনয়নপত্র নেওয়ার সময়ই সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আচরণবিধি মানার বিষয়ে অঙ্গীকারনামা নিচ্ছেন তারা। প্রার্থী হওয়ার পর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

আচরণবিধি বিধি মেনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারণায় কোনো বিধি-নিষেধ নেই।

তবে অতীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রার্থীরা বেশ রাত পর্যন্ত মাইক চালালেও এবার সে সুযোগ পাবেন না বলে ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন।

“প্রার্থীদের জানিয়ে দিতে হবে- দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে মাইক ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। প্রতি ওয়ার্ডে প্রচারণার জন্য একটি ও পথসভার জন্য একটির বেশি মাইক ব্যবহার করতে পারবেন না,” বলেন ইসির উপ সচিব সামসুল।

তিনি বলেন, পোস্টার নির্ধারিত মাপের ও সাদাকালো হতে হবে। মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া বা প্রার্থনারত অবস্থার কোনো ছবি পোস্টারে ব্যবহার না করে সাধারণ ছবি রাখতে হবে। সেই সঙ্গে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও তারিখ থাকতে হবে।

রাজনৈতিক দল, প্রতীক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি পোস্টারে ব্যবহার করা যাবে না।

সিটি করপোরেশনের কোনো স্থাপনা, যানবাহন বা দেওয়ালে পোস্টার লাগানো ও প্রচারপত্র বিতরণ করা যাবে না। তবে টাঙানো যাবে। কোনো বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না।

উস্কানিমূলক বক্তব্যের পাশাপাশি ধর্মীয় উপসানালয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন না প্রার্থীরা।

দেওয়াল লিখন ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের ওপর থাকছে নিষেধাজ্ঞা।

প্রচারণায় পথসভা ও ঘরোয়া সভা ছাড়া কোনো জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। সড়ক আটকে মঞ্চ তৈরি ও পথসভা করা যাবে না।

এছাড়া আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল, সড়কে নির্বাচনী ক্যাম্প, কোনো গেইট ও তোরণ নির্মাণেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড়া কোনো মেয়র প্রার্থী প্রচারণাকালে ভোটার স্লিপ দিতে পারবেন না। প্রচারণায় নিজের প্রতীক বোঝাতে জীবন্ত কোনো প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না।

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সর্বোচ্চ ৮ টাকা হলেও সিটি নির্বাচনে ভোটার পিছু মেয়র প্রার্থী গড়ে সর্বোচ্চ ২ টাকা ও কাউন্সিলর প্রার্থী গড়ে সর্বোচ্চ ৬ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

এছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় পাঁচ জনের বেশি সমর্থক থাকতে পারবে না বলেও রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কেউ আগাম প্রচারে নেমেছেন কি না তা দেখতে নির্বাচনী এলাকায় এরইমধ্যে নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।

নির্দেশের পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যানার-পোস্টার না সরানোয় ইতোমধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রায় দুই হাজার আগ্রহী ব্যক্তি গত নয় দিনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রার্থিতা বাতিলে ক্ষমতাও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নির্বাচন বিধি সংশোধনের পর এবারই প্রথম ঢাকায় সিটি করপোরেশন  নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলায় বিষয়গুলো সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করার ওপর খুব গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।