গ্রেপ্তার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতে চেয়েছে পুলিশ।
Published : 25 Feb 2015, 12:11 PM
বুধবার বিকাল ৩টার দিকে মান্নাকে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে নেওয়া হয়। সোয়া ৩টার দিকে তাকে তোলা হয়েছে কাঠগড়ায়।
গুলশান থানার সহকারী উপকমিশনার আব্দুল বারিক তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেছেন বলে আদালত পুলিশের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন।
মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমানের আদালতে তার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সেনা হস্তক্ষেপে ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ চেয়ে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে মান্নার টেলিফোন আলাপের অডিও টেপের ভিত্তিতে রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সারা দেশে শুরু হয় তুমুল আলোচনা।
এরইমধ্যে মঙ্গলবার ভোররাতে মান্নাকে বনানীতে তার ভাইয়ের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হলেও আটকের ২১ ঘণ্টা পর এই রাজনীতিবিদকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৩১ ধারায় মান্নার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়েছে, যাতে সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহের উসকানি দেওয়া অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার গুলশান থানার এসআই সোহেল রানার দায়ের করা এ মামলায় মান্নার সঙ্গে টেলিফোন আলাপে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় সেই ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।
অডিও টেপে ওই ব্যক্তির সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে শোনা যায় মান্নাকে।
ওই ব্যক্তি কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার আগ্রহ দেখালে মান্নাকে বলতে শোনা যায়, “জুনিয়র সিনিয়রতো একটা ব্যাপার আছে। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে ইফেক্টিভ যারা। অ্যান্ড হু আন্ডারস্ট্যান্ড, হু নো, এ রকম হলে ভালো।
“মানে যার সাথে শেয়ার করা যাবে, যিনি আমাকে এনলাইটেন করতে পারবেন এবং মে বি আমিও তাকে বুঝতে পারব, বোঝাতে পারব।”
বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতা হিসেবে ডাকসুর দুই বারের নির্বাচিত ভিপি মান্না আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে কর্মীদের রোষের মুখে পড়েছিলেন।
মান্নাকে আটকের খবরে বুধবার বিএনপির প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে তাকে পরিবারের কাছে ফেরত দিতে সরকারকে আহ্বান জানান।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, মান্না বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশ করে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র করছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনীতে বিদ্রোহ সংঘটনে কেউ উসকানি দিলে বা এ ধরনের কোনো কর্মকর্তা, নাবিক বা এয়ারম্যানকে তার আনুগত্য বা দায়িত্ব থেকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করলে তার শাস্তির জন্য সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধ বিষয়ক দণ্ডবিধির সপ্তম অনুচ্ছেদের ১৩১ ধারা প্রযোজ্য হয়।
এই ধারায় সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছ।