একাত্তরে পাবনা জেলায় রাজাকার, স্থানীয় বিহারী ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে হত্যা ও গণহত্যা চালিয়েছিলেন মাওলানা আব্দুস সুবহান; সেই অপরাধে ফাঁসির রায় শুনে কাঠগড়ায় নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখা যায় তাকে।
Published : 18 Feb 2015, 05:14 PM
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার জামায়াতের এই নায়েবে আমিরের সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করে।
রায়ের জন্য বুধবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয় সুবহানকে। সকাল ৮টা ৫৬ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছানোর পর তাকে রাখা হয় হাজতখানায়।
এদিন আদালতের বাইরে রায় পর্যবেক্ষণে আসা সাংবাদিক ও আইনজীবীদের ভিড় ছিল তুলনামূলক কম। অন্যান্য রায়ের দিন ট্রাইব্যুনালের বাইরের রাস্তায় গাড়ি চলাচলে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বুধবার তেমনটি দেখা যায়নি।
বেলা ১১টার কিছুক্ষণ আগে সুবহানকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালত কক্ষের কাঠড়গায়। ১১টায় এজলাসে এসে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক আসন গ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান যখন ১৬৫ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত সার পড়া শুরু করলেন তখন বিমর্ষ দৃষ্টি নিয়ে কাঠগড়ায় চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় সুবহানকে। তার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা। গায়ে খাঁকি হাফ স্যুয়েটারের সঙ্গে মাথায় টুপিও ছিল পাবনা আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক এই হেড মাওলানার।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলে, “আব্দুস সুবহান ও তার সহযোগীরা ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে সাধারণ মানুষদের টেনে হিঁচড়ে বের করে তলোয়ারের আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করেন। একি নিষ্ঠুরতা! অভিযুক্ত আব্দুস সুবহানের এ বর্বরতা বিশ্বাস করা কঠিন।”
এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী তহুরুল আলম মোল্লা শুনানিতে আদালতকে জানিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ঈশ্বরদী জামে মসজিদের পাশে রেলওয়ের কয়লার ডিপোতে তার চোখের সামনে তার বাবাকে নিজে হাতে ছুরি মারেন সুবহান।
ওই মসজিদে আশ্রয় নেওয়া ১৯ জন নিরস্ত্র মানুষকে সুবহানের উপস্থিতিতে একই জায়গায় নিয়ে হত্যা করা হয়।
রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর পাবনা শাখার আমির হিসেবে সুবহান তার দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান। এতে প্রমাণিত হয় জামায়াতে ইসলামী একটি সন্ত্রাসী দল।
মৃত্যুদণ্ডই তার অপরাধের ‘যোগ্য শাস্তি’ উল্লেখ করে বিচারক বলেন, “তার অপরাধের তুলনায় বয়স বিবেচনায় তার সাজা কমিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই অর্থবহ নয়।”
রায়ে সুবহানের বিরুদ্ধে আনা ১, ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগে হত্যা ও গণহত্যার দায়ে মৃত্যু পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয় আদালত। এছাড়া ২ ও ৭ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ৩ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণা চলাকালে বেশিরভাগ সময় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকেন সুবহান, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশে এক সময় সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন।
তবে রায়ের শেষ অংশে সাজা ঘোষণা শুরু হলে মাথা উঠিয়ে চোখ বড় করে সাজা ঘোষণা শুনতে থাকেন সুবহান। মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হওয়ার পরও তাকে নিশ্চুপ দেখা যায়।
সাজা ঘোষণার পরপরই বিচারকরা এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর সুবহানের হাত ধরে আদালত কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায় পুলিশ সদস্যরা। পরে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।