যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে নাক গলাতে তিনি ঢাকায় আসেননি।
Published : 17 Feb 2015, 03:02 PM
তিন সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে আসার পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেছেন, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আরও ‘গভীর ও বিস্তৃত’ করতেই তার মনোযোগ থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জানান, ‘বিশ্বে যারা বাংলাদেশের বন্ধু’, তারা সবাই চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর বাংলাদেশ যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তাহলে তা দিতে তার দেশ প্রস্তুত।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের আহ্বান জানাবে কি-না সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে একের পর এক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় বার্নিকাটকে।
সংলাপের কোনো আহ্বান না জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সংকটের সমাধান বাংলাদেশকেই করতে হবে।
নাশকতাকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার’ হিসাবে ব্যবহারের কঠোর সমালোচনা করেন বার্নিকাট। একইসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কোনো দলেরই পক্ষ নেয় না।
“আমি খুব সরাসরি বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক শক্তি বা দলের পক্ষ নেয় না।”
পেশাদার কূটনীতিক বার্নিকাট বাংলাদেশে আসার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানব সম্পদ বিষয়ক ব্যুরোতে উপ-সহকারী সচিব পদে দায়িত্বে ছিলেন। ২৭ বছরের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বার্নিকাট দক্ষিণ এশিয়া নিয়েও কাজ করেছেন।
গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় আসার পর ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিচয়পত্র পেশ করেন মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। বিএনপি জোটের টানা অবরোধের মধ্যেই ঢাকায় তার দায়িত্বপালন শুরু হয়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে যে কর্মসূচির শুরু হয়েছিল।
২০১৪ সালের শুরুতে বিএনপির বর্জনের মধ্যে ওই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ মনে না হওয়ায় ‘যতো দ্রুত সম্ভব’ সব দলের অংশগ্রহণে আবারও নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে।
রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের ছাড়পত্র পাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক সিনেট কমিটির শুনানিতে বার্নিকাটও ওই নির্বাচনকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলেছিলেন।
বাংলাদেশে আরও ‘বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার’ নিশ্চিত করতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসারও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
“আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, আর এই বিশ্বাস থেকেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আমরা এগিয়ে নিতে চাই।”
বার্নিকাট বলেন, ওয়াশিংটনে কাউকে তিনি বলতে শুনেছিলেন যে গণতন্ত্রের জন্য আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের মানুষের জিনগত।
“আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশকে বোঝানোর জন্য এটা খুবই চমৎকার উপায়। আমার মনে হয়, আমাদের দুই দেশের মানুষেরই এটা সাধারণ বৈশিষ্ট।”
বাংলাদেশের সমাজকে একটি ‘গণতান্ত্রিক সমাজ’ অভিহিত করে বার্নিকাট বলেন, এ দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধানে এই সুবিধা কাজে লাগাবে বলেই তার বিশ্বাস, যাতে সবাই তাদের মত প্রকাশ করতে পারে।
“এই সহিংসতা বন্ধ করতে, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারস্পরিক দূরত্ব কমিয়ে আনতে সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা একটি মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে দেশ হবে নিরাপদ ও সমৃদ্ধ।”
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্বকে আমেরিকার জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে দুই দেশের মধ্যকার যৌথ আগ্রহ ও পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে।
“আমি এ দেশের সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজের সঙ্গে আমাদের যৌথ আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য মুখিয়ে আছি।”
সহিংসতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, মানুষ চলাফেরা করতে পারছে না, কাজ করতে পারছে না, এমনকি পণ্য পরিবহনও বিঘ্নিত হচ্ছে। আর এই সবকিছু এ দেশের রক্তপ্রবাহ আটকে দিচ্ছে।
অস্থিতিশীলতা জঙ্গিবাদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে বলেও বার্নিকাট সতর্ক করে দেন।