যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও ভালো হবে: মজীনা

বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট কোনো দলের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নেই- বেশ জোর দিয়েই এ মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরও উন্নত হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2014, 01:28 PM
Updated : 20 Dec 2014, 05:40 PM

তিনি বলেন, “রাজনীতির খেলায় আমেরিকা কোনো শক্তিকে মদদ দেয় না। এটা আপনাদের, বাংলাদেশের মানুষের জানা থাকা দরকার।”

যুক্তরাষ্ট্রের এক সহকারী মন্ত্রীকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে বাজারে জল্পনাকে দৃশ্যত নাকচ করলেন মজীনা।

অচিরেই অবসর নিতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনীতিক তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকা ছাড়ার আগে শনিবার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে ব্যতিক্রমী মজীনা ৬৪ জেলা ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে অনেক কথা বললেও দৃশ্যত আওয়ামী লীগের মন পাননি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে তার ভূমিকা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলেছে ক্ষমতাসীন দলটি।

সম্প্রতি এক জনসভায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মজীনাকে ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতায় ফেরা আটকাতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালকে ‘দুই আনার মন্ত্রী’ও বলেন।

নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের পশ্চিমা মিত্রদের পক্ষ থেকে দ্রুত একটি ‘অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছিল।

আশরাফের মন্তব্যে গণমাধ্যমজুড়ে জল্পনা শুরু হয় যে, এতে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হবে। বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়, এই মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে।

মার্টিন লুথার কিংয়ের মন্তব্য উদ্ধৃত করে মজীনা বলেন, “আমার চোখ পুরস্কারের উপর,” যার অর্থ হচ্ছে, ‘লক্ষ্য স্থির’।

“আপনি জানেন আপনি কী করার চেষ্টা করছেন। যা করছেন তার প্রতি লক্ষ্য স্থির রাখুন, কোনো গোলমালের দিকে কান দেবে না। তাহলে আপনার দৃষ্টি লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে না। আপনি পথভ্রষ্ট হবেন না। এবং আপনি সবসময় পুরস্কারের উপর নজর রাখবেন।

“এবং আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সম্পর্ক এখন বিস্তৃত, গভীর ও শক্তিশালী। এবং এর চেয়ে বেশী সুখী আমি কিভাবে হতে পারি?

“... এবং সামনের দিনে এটা আরও শক্তিশালী, গভীরতর এবং বিস্তৃত হবে... সেটাই আমার লক্ষ্য,” বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

বাংলাদেশকে তুলে ধরার তার এত চেষ্টার পরও কেন ক্ষমতাসীন দল তার প্রতি ‘ততটা সহমর্মী নয়’- এমন প্রশ্নের জবাবে মজীনা বলেন, তার কোনো অভিযোগ নেই।

“ওই সব বিষয়ে আপনারা বা অন্যরা কথা বলুক। আমি অংশীদারিত্ব নির্মাণ করছি। সরকার, সুশীল সমাজ ও জনগণ উপযুক্ত অংশীদার হিসেবে রয়েছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই।

“এই অংশীদারিত্ব ও ফলাফল যে কারোর ধারণার অতীত। এবং এখন এই অংশীদারিত্ব যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে- তা আমারও কল্পনার অতীত ছিল।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতি এখনো বহাল রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র মদদ দিচ্ছে বলে কোনো ধরনের জল্পনাকে নাকচ করে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে মজীনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে তার সময়ের সবচেয়ে বড় অর্জন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশদারিত্বের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ।

“এটা (অংশীদারিত্ব) যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে বড়। এটার নিজস্ব কাঠামো আছে।”

দেশজুড়ে তার সফরের সময় সরকারের ‘পূর্ণ সহযোগিতার’ জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ যাদুর দেশ এবং এটা সম্ভব হয়েছে মানুষের কঠোর শ্রমের ফলে।

লাল ফিতার দৌরাত্ম, দুর্নীতি, আইনের শাসনের অভাব ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকি দেশের উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধক হলেও তিনি বিশ্বাস করেন এগুলো সমাধান করা সম্ভব।

মালয়েশিয়ার মতো ‘এশিয়ার পরবর্তী বাঘ’ হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটার জন্য শিক্ষার গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধন বড় চ্যালেঞ্জ।

‘এশিয়ার প্রকৃত বাঘ’ হতে বাংলাদেশের সহায়ক চারটি খাতের উল্লেখ করেন তিনি। এগুলো হলো- পোশাক, চামড়া, ওষুধ ও তথ্যপ্রযুক্তি।

তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক করিডোরে বাংলাদেশ ব্যাপক অবদান রাখতে পারে।

তার সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সংস্কারে সরকারের পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ। এবিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মজীনা বলেন,  গ্রামীণ ব্যাংকের সততা ও কার্যকরিতা ও এর অনন্য সরকার কাঠামোর সংরক্ষণকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র।

সংবাদ সম্মেলনে অনেকটা স্মৃতিকাতর ও আবেগাপ্লুত বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেও কোনোভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকতে চান তিনি।

“আজ একটা বিষণ্ন দিন। আমি আসলেই এখানে ভাল সময় কাটিয়েছি। সম্পর্কের মান, ব্যাপ্তি ও গভীরতা নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ।”

জানুয়ারিতে মজীনার উত্তরসূরী হিসেবে মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের দায়িত্ব নেওয়ার কথা রয়েছে।

অন্তর্বর্তী এই সময়ে ডেপুটি চিফ অব মিশন ডেভিড মিল শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।