সম্পর্ক এখন সবচেয়ে শক্তিশালী: মজীনা

খালেদা জিয়া ও রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করে ঢাকায় ওয়াশিংটনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2014, 03:08 PM
Updated : 17 Dec 2014, 04:05 PM

৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মতভেদের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি নিশা দেশাই বিসওয়ালকে কটাক্ষ করে মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মন্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্য এল।

নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশের এখনকার পরিবেশকে ‘শান্তিপূর্ণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে দশম সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়া রওশনের সঙ্গে বুধবার দেখা করার পর ওই নির্বাচন বর্জনকারী খালেদার গুলশানের বাড়িতে যান মজীনা।

বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বেশি শক্তিশালী, গভীর ও বিস্তৃত।”

এর আগে গুলশানে রওশনের বাড়িতে মজীনা সাংবাদিকদের বলেন, “অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন দৃঢ়। এর (কূটনৈতিক সম্পর্ক) অংশীদার হতে পেরে আমি গর্ব অনুভব করি। দুই দেশের সম্পর্কের এই ধারা অব্যাহত থাকবে এটাই আমার কামনা।”

আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা খালেদার সঙ্গে বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে মজীনা বলেন, গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ভূমিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

“অবশ্যই সব রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক চর্চার যে সুযোগ রয়েছে, তা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন।”

নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রতিক জনসভায় জনসমাগম নিয়ে খালেদা জিয়া নিজের সন্তোষের কথা জানিয়েছেন বলে রাষ্ট্রদূত জানান।

রওশনের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

“নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রদূত একটি লাইনও উচ্চারণ করেননি। ওরা যে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে, আজকের বৈঠকই তার প্রমাণ।”

বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন উপভোগ করেছেন বলে খালেদা ও রওশন উভয় নেত্রীকেই জানান মজীনা। বাংলাদেশের সব জেলা সফরের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

“বাংলাদেশ আমার কাছে একটি বিশেষ জায়গা। এদেশের মানুষও খুব ভালো, ভেরি স্পেশাল। আমি বিদায় বলব না, বরঞ্চ বলব, আবার দেখা হবে। আমি আগামী বছর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সঙ্গীত উৎসবে যোগ দিতে এদেশে আসব।”

বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী বিদায়ী এই কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগার’। কৃষি, স্বাস্থ্য, তথ্য প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও শিক্ষাখাতে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটেছে।

মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, জন্মহার কমানো ও জন্ম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে ‘অভিভূত’ বলেও জানান তিনি।

“বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, যা বিশ্বে প্রশংসনীয়। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ যে ভূমিকা রেখেছে তা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।”

খালেদার বাড়িতে নিজের স্ত্রীকেও নিয়ে যান মজীনা। বিএনপি চেয়ারপারসনকে উপহার হিসেবে দেওয়া নিজের গাছটি দেখতে বাগানে যান তিনি।

দুই বছর আগে খালেদা জিয়াকে একটি গাছের চারা উপহার দিয়েছিলেন মজীনা। টবে লাগানো ওই গাছের চারা থেকে সম্প্রতি আরও দুটি গাছ জন্মেছে।

মজীনার সঙ্গে বৈঠক খালেদার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।

রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে রওশনের সঙ্গে তাজুল ছাড়াও ছিলেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ফখরুল ইমাম, তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।

মজীনার উত্তরসূরি হিসেবে ইতোমধ্যে মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের নাম চূড়ান্ত করেছে ওয়াশিংটন। তিনি জানুয়ারির শেষ দিকে ঢাকায় আসবেন বলে বিদায়ী দূত মজীনা জানান।