ট্যাংকার ডুবে সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়া বন্ধে সরকার যথাসময়ে পদক্ষেপ না নিয়ে এখন স্থানীয় জনগণের উদ্যোগকে পুঁজি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি।
Published : 15 Dec 2014, 07:39 PM
সোমবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়, সুন্দরবন ধ্বংস করে বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র চলছে।
কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেন, “গত ৯ তারিখে তেলবাহী জাহাজটি সুন্দরবনে যুবে যাওয়ার পরে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেনি। ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
“স্থানীয় মানুষ নিজ জীবিকা রক্ষার তাগিদে কাজ শুরু করলে তাতেও সরকারের কোনো সহযোগিতা দেখা যায়নি। এখন সরকার বলছে, তারা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে।”
সরকারের ভূমিকার জন্য সুন্দরবন মহাবিপর্যয়ের মধ্যে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সুন্দরবনকে ধ্বংস করে সেখানে একটি বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র চলছে। রামপালে ওরিয়ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ বিভিন্নভাবে ভূমি দখলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সকালে পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে ‘মহাবিপদে সুন্দরবন: সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
৯ ডিসেম্বর শেলা নদীতে কার্গোর ধাক্কায় সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েলবাহী একটি অয়েল ট্যাংকার ডুবে গেলে তেল ছড়িয়ে পড়ে এই বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে থাকা নদী ও খালগুলোতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “তেলবাহী জাহাজ ডুবিতে নদী কিংবা সুন্দরবনই আক্রান্ত হয়নি, তাদের জীবিকাও ব্যাহত হচ্ছে। তাদের মাছ ধরার জালগুলোও ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
“দুর্ঘটনার পর থেকে নদী ও খালগুলোতে বিভিন্ন মাছ যেমন, পাতারী, পার্শে, ট্যাংরা, চিংড়িপোনা ও কাঁকড়া দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে এবং তারা সেগুলো সংগ্রহ করতে পারছে না।”
সংবাদ সম্মেলনে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল বাশার।
তিনি বলেন, “সুন্দরবনের নদীতে ফার্নেস তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে যেসব উদ্ভিদ ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে, তার প্রভাব আমরা এখন দেখতে পাব না। এ প্রভাব দৃশ্যমান হবে আরো অন্তত তিন প্রজন্ম পরে। তখন এ প্রভাব দেখার জন্য এখন বসে থাকলে চলবে না।”
আনু মুহাম্মদ বলেন, সুন্দরবনে তেলবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনায় সরকার যদি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন না করে, তাহলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিসহ জনগণকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি সুন্দরবনে সরেজমিনে তদন্তে যাবেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদসহ তিন দফা দাবিতে আগামী ২২ ডিসেম্বর সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়।
এই তিন দফার মধ্যে রয়েছে- জাহাজডুবির কারণে জীবিকা ব্যাহত হওয়া স্থানীয় মৎস্যজীবি ও বনজীবিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, শেলা নদীর নৌপথটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা এবং রামপালে ওরিয়ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া বন্ধ করা।