হলে ওঠার ২৪ দিনের মধ্যে লাশ হল তাপস

মাত্র ২৪ দিন আগেই হলে উঠেছিলেন তাপস সরকার, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মারা যাওয়ার পর যার লাশ নিয়ে গেল সতীর্থরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2014, 05:35 PM
Updated : 16 Dec 2014, 06:07 AM

সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিল না বলে জানিয়েছেন অন্য ছাত্ররা। তারা বলছেন, হলে থাকা ‘স্বার্থে’ তাপসকেও মাঝে-মধ্যে যেতে হত মিছিল-সমাবেশে।

তেমনি রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচিতে ফুল হাতে একটি পক্ষের সঙ্গে গিয়েছিলেন তাপস। কিছু সময় পর ওই পক্ষের সঙ্গে অন্য পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

তাপস থাকতেন শাহ আমানত হলে, সংঘর্ষের সময় ওই হলটিতে ছিল ছাত্রলীগের ‘চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি)’ গ্রুপের অবস্থান। 

পাশের হল শাহজালাল থেকে আসা গুলিতে প্রাণ হারান এই শিক্ষার্থী, ওই হলটিতে তখন অবস্থান নিয়েছিল ক্ষমতাসীন সংগঠনটির ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভি-এক্স)’ গ্রুপ।

সিএফসি গ্রুপের নেতারা তাপসকে তাদের পক্ষের কর্মী বলে দাবি করেছেন। তবে হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রাবাসে থাকতে হলে নিয়ন্ত্রক সংগঠনের কথায় অনেক কিছুই করতে হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে ১১টার সময় শাহজালাল হলের ভেতর থেকে শাহ আমানত হল লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তখন শাহ আমানত হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়ানো ছিলেন তাপস।

গুলি তার পিঠে আঘাত করে। এর এক ঘণ্টা পরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাপস।

তাপস কোনো সংগঠন করতেন কি না, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তার বড় ভাই আশীষ সরকার, যিনি নেত্রকোনায় থাকেন।

“ও রাজনীতি করত কি না, তা আমরা জানি না। সেটা ওর বন্ধুরাই ভালো বলতে পারবে।”

তাপসের মৃত্যুতে বন্ধুদের কান্না

তাপসের মরদেহ তার বন্ধুরা নিয়ে গেছে নেত্রকোনায়, সেখানে তার কয়েক ভাই থাকেন। তবে তার বাড়ি পাশের জেলা সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থানার বিষ্ণুপুর গ্রামে, সেখানে থাকেন তার বাবা-মা।

উচ্চ ‍মাধ্যমিকে নেত্রকোনা সরকারি কলেজে তাপসের সহপাঠী বিদ্যুৎ মহাপাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাপস সক্রিয় রাজনীতি করত না। হলে থাকত এই সূত্রে হয়ত মিছিল-সমাবেশে যেত।”

উচ্চ মাধ্যমিকে এ প্লাস পাওয়া তাপস শাহ আমানত হলে ওঠেন ২১ নভেম্বর।  

সহপাঠীরা জানায়, সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী হলে আসন বরাদ্দ চেয়ে লিখিত আবেদনও করেন তাপস। তবে আসন বরাদ্দ না হওয়ায় শাহ আমানত হলে ‘ডাবলিং’ (এক আসনে দুইজন) থাকার অনুমতি নিয়ে থাকছিলেন তিনি।

রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ছাত্রলীগ যখন ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায়, তখন তাপসকে ফুল হাতে দেখা গেছে।

ফুল দিয়ে ফিরে এসে শাহ আমানত হলের ‍সামনেই বিবাদে জড়িয়ে পড়ে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক দুই সংগঠন সিএফসি ও ভিএক্স’র কর্মীরা।

সংঘর্ষে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের আল আমিন রিমন, মৃত্তিকা বিজ্ঞানের সাব্বির হোসেন এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আলমও আহত হন।

সিএফসির নেতা অমিত কুমার বসু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হলের ভেতর দাঁড়ানো অবস্থায় হত্যার উদ্দেশ্যেই তাপসকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।

তাপস সরকার

 

“সকালে ফুল দিয়ে এসে এখন সে লাশ হয়ে গেল। ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে নয়, একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”

ছাত্রলীগের এই দুই পক্ষই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।  

তাপস মারা যাওয়ার পর বিকালে চমেক হাসপাতালে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “একটি চক্র আমার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারই অংশ হিসেবে এ হত্যাকাণ্ড।”

সিএফসি ও ভি-এক্স এই দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবারই প্রথম নয়, এর আগে বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে সংঘাত বাঁধে।

গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চবি ছাত্রলীগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর ১৬ নভেম্বর মহিউদ্দিনের বাড়িতে বৈঠক করে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ ঘোষণা দিয়েছিলেন দুই পক্ষের নেতারা।

ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ১০ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৯ নভেম্বর খুলে দেওয়া হয় শাহ আমানত হল।

এরপরই হলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগের তিন পক্ষ। গত কয়েকদিন ধরেই ক্যম্পাসে সংঘর্ষের গুঞ্জন চলছিল।

এর এক মাস পোরোনোর আগেই আবার সংঘর্ষে জড়াল ভিএক্স ও সিএফসি, যাতে প্রাণ গেল তাপসের।