রং-তুলির মুন্সীয়ানায় বইয়ের প্রচ্ছদের শিল্পমানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে কাইয়ুম চৌধুরী, তার আকস্মিক প্রস্থানে সেই অভাবটিই বেশি বাজছে প্রকাশকদের মধ্যে।
Published : 01 Dec 2014, 12:09 AM
রোববার রাতে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাওলা ব্রাদার্সের কর্ণধার আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, প্রচ্ছদে বইয়ের বিষয়বস্তু ফোটানোর কেউ রইল না।
এই শিল্পীর প্রচ্ছদ করা হাজার খানেক বইয়ের প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্স। এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম বইটির প্রচ্ছদেও ছিল কাইয়ুম চৌধুরীর রং-তুলির পরশ। এটি আব্দুস শাকুরের ‘ক্ষীয়মান’ উপন্যাস, বেরিয়েছিল ১৯৬১ সালে।
মাহমুদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার ডিজাইনে ১৯৫৪ সালে আমাদের প্রকাশনা সংস্থার শোরুম যাত্রা করে। এমনকি মনোগ্রাম লোগোও তার করা।”
কাইয়ুম চৌধুরীর কাজের ধরন তুলে ধরে এই প্রকাশক বলেন, “বইয়ের কভার করার সময় উনি বলতেন, উনি একটা শিল্পকর্ম করছেন। বাংলা টাইপোগ্রাফি উনি পুরো বদলে দিয়েছেন। বইয়ের প্রচ্ছদ উনার মতো করে এমন কাউকে পাইনি।
“বিশেষ করে উনার রেখাচিত্র একেবারেই ভিন্ন। এটা দেখেই বোঝা যায়, এটা কাইয়ুম চৌধুরী। তার একটা বই হাতে নিলেই পাঠক বইয়ের বিষয়বস্তু প্রচ্ছদে দেখতে পাবে। এটা করার আর কেউ রইল না।”
কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু সবার জন্যই অপূরণীয় ক্ষতি উল্লেখ করে মাহমুদুল হক বলেন, “আজকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার আর্মি স্টেডিয়ামে যাওয়ার সময় একটি প্রচ্ছদের বিষয়ে তিনি আগামীকাল যোগাযোগ করতে বলেছিলেন।”
আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উৎসবে মঞ্চে বক্তৃতার এক পর্যায়ে হঠাৎ পড়ে যান কাইয়ুম চৌধুরী। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই মৃত্যুতে এদেশের চিত্রশিল্প একজন প্রবাদ পুরুষকে হারাল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সৈয়দ আবুল বারক্ আলভী, যেখানে অধ্যাপক হিসেবে ১৯৯৭ সালে অবসরে গিয়েছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বারক্ আলভী বলেন, “উনি তো একজন প্রবাদ পুরুষ। শুধু ফাইন আর্টস না, গ্রাফিক্স ডিজাইনে ওনার বিরাট অবদান।
“গ্রাফিক্স ডিজাইনে তার মতো অবদান কারোরই নাই। ১৯৬৩ সালে আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই উনাকে জানি। আমরা উনার রীতিমত ভক্ত ছিলাম।”
অধ্যাপক আলভী জানান, রোববার সকালেই জাতীয় জাদুঘরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের কমিটি হয়, যার আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাইয়ুম চৌধুরীকে।