তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় অনলাইনে থাকা অবস্থায় সবাইকে দায়িত্বশীল ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্রের সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
Published : 02 Nov 2014, 01:07 AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে শনিবার ‘প্রযুক্তি ও অপরাধ’ শীর্ষক বক্তৃতায় ইন্টারনেট ব্যবহারের নানা দিক তুলে ধরে এই পরামর্শ দেন এই সাংবাদিক, যিনি বিবিসির কর্মঅভিজ্ঞতার সূত্রে সংবাদ মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের প্রথম দিকেই এর সংস্পর্শে আসেন।
২০১৩ সালে চালু হওয়া এই বিভাগটি শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত শিক্ষামূলক কলোকুইয়ামের আয়োজন করে, যার এবারের আয়োজনে সাইবার অপরাধ এবং তা এড়াতে সচেতনতার ওপর আলোকপাত করেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
তিনি বলেন, “সাইবার অপরাধ এড়াতে সচেতনতাই মূল চাবিকাঠি। নিজের ভারচুয়াল পৃথিবীটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।”
যে বিষয়টি নিজের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, শুধু তা-ই যেন ইন্টারনেটে তোলা হয়, সবার কাছে সেই সচেতনতাও প্রত্যাশা করেছেন তৌফিক খালিদী।
“অনলাইনে একজনের আচরণ অন্যের ওপর প্রভাব ফেলে। তা ঘরে হোক, কাজে হোক, বৈশ্বিক ডিজিটাল সম্প্রদায়ে হোক, এমনকি বিশ্বে এর প্রভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণই প্রত্যাশিত।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রামাণ্যচিত্রসহ পাওয়ার পয়েন্টে পুরো বিষয়বস্তু তুলে ধরে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বক্তৃতা করেন তৌফিক খালিদী।
এসময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর প্রধান সম্পাদক তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অপরাধ প্রবণতার ধরনগুলো তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন ধরনের এই অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরতে গিয়ে ফেইসবুক ব্যবহার করে রামু ট্র্যাজেডি এবং নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের ব্লগে তার মৃত্যুর পর লেখা তোলার বিষয়টি আনেন তিনি।
এছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহারের নিয়মিত হয়রানির চিত্রে সাধারণ মানুষ থেকে সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত জীবন ও হুমকির ধরন, বহির্বিশ্বে অপরাধপ্রবণতা এবং অপরাধের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন তৌফিক খালিদী।
পাশাপাশি সাইবার অপরাধ রোধে প্রচলিত আইন ও তার প্রয়োগ এবং বহির্বিশ্বে দণ্ডিতের কারণগুলো ব্যাখ্যা করেন তিনি।
তৌফিক খালিদী বলেন, “প্রযুক্তি হচ্ছে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ। প্রযুক্তি হচ্ছে দুই ধারের তলোয়ার-যার একপাশে উপকার, অন্যপাশে ক্ষতি।”
সবার আগে প্রত্যেককে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে এই সম্পাদক বলেন, যে কোনও ধরনের অনলাইন কার্যক্রম (ইমেইল, ওয়েবপেজ, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ইত্যাদি) সময় ও তারিখসহ রেকর্ডে রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ভার্সন বা প্রিন্টেড কপি করে রাখা যেতে পারে। নিজের সুবিধা মতো ব্যক্তিগত ও নিরাপত্তা সেটিংস করে রাখতে হবে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে স্নাতকোত্তর ও সম্মান প্রথম শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী, তরুণ শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাদেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে নির্ধারিত সময়ের পৌনে এক ঘণ্টা পরে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল করে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম অনুষ্ঠানে তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল সাংবাদিকতার পুরোধা’ অভিহিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র থাকা অবস্থায় তার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার কথাও এখনকার শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন।
সাইবার অপরাধ প্রবণতার ধরন, প্রতিকার, পুলিশ ও বিচারকদের ভূমিকা, অনলাইন সাংবাদিকতা, নামসর্বস্ব অনলাইন পত্রিকা, ধর্মীয় উগ্রতা, সম্প্রচার নীতিমালা, সংবাদ প্রকাশ-প্রচার প্রভৃতি নিয়ে জানতে চান তারা।
এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজের নানা অভিজ্ঞতার ঝাঁপিও খোলেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
তিনি বলেন, এক সময় কথা বলতেও বিধি-নিষেধের মধ্যে থাকতে হয়েছে। এখন কথা বলা শুরু হয়েছে। সবাই জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এলে অপরাধ ধীরে ধীরে কমে আসবে।
“দেশে আইনের সঙ্কট যতটা না, তার চেয়ে বেশি সঙ্কট প্রয়োগের। আমরা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সবাই সচেতন হলে এবং দায়িত্বশীল হলে সবাই নিজ নিজ জায়গায় শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারব।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক জিয়া রহমান এই ধরনের বক্তৃতার যাত্রা অব্যাহত রাখার কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিভাগের পক্ষ থেকে তৌফিক খালিদীকে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন তিনি।