বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার সকাল ১০টার পর এ মামলার রায় ঘোষণা করবে। রায়ের জন্য নিজামীকে সকাল ৯টা ১৯ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়েছে।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার রায়ের দিন ঠিক করার পরপরই রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদারের প্রস্তুতি শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিদ্ধান্ত হয় বিজিবি নামানোরও।
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে রাতেই ৭১ বছর বয়সী নিজামীকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, যিনি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের ১৬টি অভিযোগে অভিযুক্ত।
সকালে হাই কোর্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ, চলছে তল্লাশি।
হাই কোর্ট পুলিশ ফাঁড়ির ওসি আবদুস সালাম জানান, আদালত এলাকায় প্রায় সাড়ে চার’শ পুলিশ সদস্য বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের আগে প্রতিবারই নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশকে অনুরোধ করে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ। এবারও তা করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মূল প্রবেশ পথে দুই সারিতে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ। আদালত চত্বরের প্রবেশপথে রয়েছেন র্যা ব সদস্যরা।
র্যা ব-৩ এর এএসপি জালাল উদ্দিন জানান, সকাল ৬টা থেকেই ট্রাইব্যুনাল চত্বরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
আগের রায়গুলোর সময় গুলিস্তান ও সচিবালয় প্রবেশপথে পুলিশের ব্যারিকেড থাকলেও এবার তা নেই। কেবল দোয়েল চত্বর থেকে হাই কোর্টের প্রবেশপথে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের আগের রায়ের দিনগুলোতে দলটি হরতাল করলেও এবার তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। তারপরও কোনও অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
এদিকে সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল চত্বরে নিজামীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করছে ঢাকা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসরদের কর্মীরা।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ইসমত কাদির গামা বলেন, “যুদ্ধাপরাধীনিজামীর ফাঁসির দাবি বাংলার মানুষের প্রাণের দাবি। এ দাবিতেই আমরা ট্রাইব্যুনালে সামনে অবস্থান নিয়েছি।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পুলিশ-র্যাবকে সহযোগিতা দিতে বিজিবিও মঙ্গলবার রাত থেকে টহলে নেমেছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাবনা, খুলনা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় সীমান্ত রক্ষীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।
একাত্তরে আল বদর বাহিনীর প্রধান নিজামীর বাড়ি পাবনায়। সেখানেও যে কোনও ধরনের নাশকতা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।
সাঁথিয়ার আটজন নিজামীর যুদ্ধাপরাধের সাক্ষ্য দেন। তারা কেউ নিরাপত্তাহীন বোধ করলে পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তায় উপজেলার ডাকবাংলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে ওসি জানান।
নিজামীর রায় ঘিরে জামায়াতের শক্তিশালী প্রভাব থাকা চট্টগ্রামেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বুধবার ভোর থেকে বিভিন্ন স্থানে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে বলে নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।”
অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা) নাইমুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর উপজেলা হিসেবে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড ও হাটহাজারীতে বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় এবং নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে এই উপজেলাগুলোতে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় পুলিশসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন।