মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছরের নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশ তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
Published : 15 Oct 2014, 01:17 AM
মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব এবং এর ওপর ভিত্তি করে একটি সুপারিশ পাঠাবো।”
বর্তমান আইনে বাংলাদেশে মেয়েরা বিয়ের যোগ্য হয় ১৮ বছর বয়সে, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ওই বয়সেই শৈশব শেষ হয়। জাতিসংঘ নির্ধারিত এই বয়সসীমার প্রতিও বাংলাদেশের সমর্থন রয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ করেই বিয়ের বয়স কমিয়ে ১৬ বছর করার বিষয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব উঠে। ওই প্রস্তাবকে বিবেচনায় নিয়ে তা নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরপর বিষয়টি দেশের বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও এই প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছে।
এর পরদিনই মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে ২০১৩ এর প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিয়ের বয়স কমানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাঠানোর কথা জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সম্প্রতি বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে নতুন আইন করার প্রস্তাবে সায় দেয় সরকার। ওই প্রস্তাবে অনুমোদনের সময় সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে বিয়ের বয়স কমানো যায় কি না- তা পর্যালোচনা করতে বলেছে মন্ত্রিসভা।
এর আগে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বিয়ের বয়স কমানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওপর গ্রামীণ জনগোষ্ঠির চাপ রয়েছে। এ জন্যই সরকার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।
এক্ষেত্রে তিনি যুক্তি দেখান, বয়স হওয়ার আগেই পালিয়ে বিয়ের প্রবণতার কারণে মেয়েদের বিয়ের বয়স দুই বছর কমানোর বিষয়টি সামনে এসেছে।
সরকারের এই তৎপরতায় দেশে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিয়ের বয়স কমানো হলে তা হবে ভুল পদক্ষেপ।
বিষয়টিকে আলোচনার টেবিলে টেনে আনায় সরকারের সমালোচনা করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, বাংলাদেশ বিয়ের বয়স কমাতে আইন সংশোধন করলে তা হবে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনার অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম ৬৭ বছর বয়সে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাওয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, বিয়ের আসলে প্রকৃত কোনো বয়স নেই।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা এবং ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসনও ছিলেন।
তবে তারা বাল্যবিয়ে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।