প্রাণের ঝুঁকির পরোয়া করেন না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কিছু উচ্চশ্রেণির লোক ভুল করলেও’ সাধারণ মানুষের ওপর তার আস্থা রয়েছে।
Published : 03 Oct 2014, 11:48 PM
তিনি জীবনের মায়া করলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসত না বলেও মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে শুক্রবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়- তিনি এবং তার দল কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন কি না।
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার জীবনের ঝুঁকি… আপনারা এটা ভুলে যান কেন এই মাটিতে আমার মা-বাবা-ভাই সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি দশ বছরের শিশু ভাইটিকেও তো ছাড়ল না।
“যেখানে আমার ছোট ভাই শিশু রাসেলকেও হত্যা করা হয়েছে, সেখানে তো জীবনের ঝুঁকি থাকবেই। সেই ঝুঁকি জেনেই তো আমি রাজনীতি করতে এসেছি। সেখানে কে কি বলল, ঝুঁকি আছে কি নেই; আমি ওটা নিয়ে পরোয়া করিনি। আমি কখনো জীবনের মায়াও করিনি।”
শেখ হাসিনা বলেন, কে কী বলল তা বড় কথা নয়, কী করা সম্ভব হলো- সেটাই আসল।
“আর বাংলাদেশের জনগণের ওপর সবসময় আমার ভরসা আছে। মানুষ কিন্তু কখনো ভুল করে না। কিছু উচ্চশ্রেণি হয়তো করতে পারে ভুল। কিন্তু সাধারণ মানুষ না। তারাই আমার ভরসার মূল জায়গা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি যদি জীবনের পরোয়া করতাম, মায়া করতাম, আপনারা গণতন্ত্র ফিরে পেতেন না। এটাও বাস্তব কথা।”
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২০০৭-০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে’ দেশে ফেরার কথাও মনে করিয়ে দেন।
“কই, আমিতো পরোয়া করি না। পরোয়া করলে আমি রাজনীতিতে আসতাম না। আমার মতো অবস্থায় কে এসেছে রাজনীতিতে? আর কে কাজ করেছে? একটু চিন্তা করে দেখেনতো… পৃথিবীর ইতিহাসে পাবেন না। হয়তো আমি আসার পরে অনেকে এসেছে।”
এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে চিন্তা করেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জন্মেছি, একদিন মরতেই হবে। আমি কাজ করে যাচ্ছি দেশের মানুষের জন্য। আমার বাবাও কাজ করে গেছেন দেশের সাধারণ মানুষের জন্য।”
বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলি। বাংলাদেশকে আমি সেইভাবেই গড়ে তুলতে চাই। সেটা আপনারা নিজেরাই পাচ্ছেন।”
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।
“সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ আমি নিয়েছি। বাংলাদেশে শান্তি ফিরে এসেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশেই আজ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান। যা আগে মোটেও ছিল না।”
‘সবারই সংযত হওয়া উচিৎ’
সম্প্রতি সাংবাদিকদের নিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসীন আলী কটূক্তি প্রসঙ্গও সংবাদ সম্মেলনে আসে।
এ বিষয়ে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহসিন আলীর বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। উনি কেন বলেছেন তার বাকগ্রাউন্ড নিয়ে আসেন। কোন পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন তাও নিয়ে আসেন।”
মহসিন আলী কেন, কোন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ‘খবিশ’ বলেছেন- তাও দেখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “তিনি কিন্তু দুঃখও প্রকাশ করেছেন।”
অবশ্য সবক্ষেত্রে আচার-আচরণ সংযত রাখারও পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
লোডশেডিং
বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে লোডশেডিং না থাকলে জনগণ এর কষ্টের কথা ভুলে যাবে।
“১১ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জন করেছি। কিন্তু মানুষের চাহিদা বেড়েছে। আগে বলত ভাত পাই না। আর এখন বলে ছেলেকে পড়াতে পারছি না, বিদ্যুৎ দেন।”
সম্প্রতি সার কারখানা চালাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
“শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দেয়াই আমাদের লক্ষ্য, আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।”
বিএনপির পাঁচ বছর ও তত্ত্বাবধায়কের দুই বছর শাসনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাত বছর নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হয়নি, নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার হয়নি, কোনো গ্যাস কূপও খনন করা হয়নি।
“আমরা ক্ষমতায় এসে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার করে খনন করেছি। গ্যাসের অভাব আছে এটা বাস্তব, তবে বিনিয়োগ হচ্ছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগ বৃদ্ধির তথ্যও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।