রোববার বিকালে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান ও নৌ সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন তদন্ত কমিটির প্রধান যুগ্ম সচিব নুর-উর-রহমান।
নৌ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ম. শাফায়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রতিবেদনে নৌ প্রশাসন পুনর্গঠন, নৌ নিরাপত্তা, আইন সংশোধন ও সার্ভে সিস্টেম পরিবর্তনসহ ২৫টি সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তার অনিয়ম ও অবহেলার বিষয়ও চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ৬২ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের বাইরে ভিন্ন আরেকটি বই করে ১৭৯ পৃষ্ঠার এই সংক্রান্ত জরুরি দলিলাদি পেশ করা হয়েছে। মন্ত্রী ও সচিব দুজনের হাতে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের দুকপি পেশ করা হয়।
এই প্রতিবেদন এখনও গোপন রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
শাফায়াত বলেন, “পুরো রিপোর্টটি মন্ত্রী পাঠ করার পর ২/১ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করবেন। এর আগে এই বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
সাত সদস্যবিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটির অন্য ছয় সদস্য ছিলেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম কুমার সাহা, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিএ এর প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ, বিআইডব্লিউটিসির প্রতিনিধি আব্দুল রহিম তালুকদার, মুন্সীগঞ্জের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার এবং কমিটির সদস্য সচিব সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম।
রিপোর্ট হস্তান্তরের সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এই তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য প্রথমে ১০ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়। পরে ১৯ অগাস্ট থেকে আরো সাত কর্মদিবস বৃদ্ধি করা হয়। ২৭ অগাস্ট এ সময়ও শেষ হলে আরো সাত কার্যদিবস সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ তৃতীয় দফা পাঁচ কর্মদিবসের সময় বাড়ানো হয় ৭ সেপ্টেম্বর, যার শেষ সময় ছিল রোববার।
তদন্ত কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, শুধু সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যেই এই তদন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না। নথিপত্র, রেজিস্ট্রেশন, সার্ভে সনদ, আবহাওয়া রিপোর্ট, নদীর ঢেউ, লঞ্চের নকশা সংশ্লিষ্ট সবই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
এ দুর্ঘটনার দিন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর তাদের সার্ভেয়ার এস এম নাজমূল হককে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু সরকার উচ্চ পর্যায়ের এ কমিটি গঠন করায় বৈঠকে করে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি বাতিল করা হয়।
গত ৪ অগাস্ট পিনাক-৬ ডুবে যায় পদ্মা নদীতে। এ দুর্ঘটনায় ৪৯ যাত্রীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। সরকারি হিসাবে এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৬১ যাত্রী।
‘অধিক মুনাফার আশায় ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে বেপোরোয়া লঞ্চ চালিয়ে অবহেলাজনিত নরহত্যার’ অপরাধে ছয় জনকে আসামি করে ৫ অগাস্ট রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
এছাড়া দুর্ঘটনার দিন মেরিন কোর্টে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর প্রথম মামলা করে।