সুপ্রিম কোর্টে এক অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে পাশের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ।
Published : 13 Sep 2014, 06:33 PM
শনিবার দুপুরে হামলার পর আহত অবস্থায়ই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে উপস্থিত হন এই শিক্ষক। ওই সময় বিএনপি সমর্থক প্রকৌশলীদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন খালেদা জিয়া।
বক্তব্যের মাঝপথে ঘটনাটি শুনে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “এখনই আমার কাছে একটি চিরকুট এসেছে। একটু আগে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার চাই।
“এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেছে, দেশের সম্মানিত মানুষের নিরাপত্তা নেই। কোনো মানুষের জান-মালের আজ কোনো নিরাপত্তা নেই।”
এই সময় ছেঁড়া শার্ট পরা বিধ্বস্ত অবস্থায় অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহকে কয়েকজন ধরে মঞ্চে নিয়ে আসেন।
তা দেখে খালেদা বলেন, “দেখছেন একজন অধ্যাপককে কী করেছে তারা। শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, এই হামলার দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে। অবিলম্বে আপনাকে গদি ছাড়তে হবে।
মাহবুব উল্লাহকে পরে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা ‘বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহবুব উল্লাহ।
এরপর দুপুর ২টার দিকে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন। সেখানে এ্যাবের মহাসমাবেশ চলছিল।
হামলার পর এ্যাবের সমাবেশ মঞ্চে খালেদার পাশে দাঁড়িয়ে মাহবুব উল্লাহ বলেন, “আমি আজ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের একটি বই প্রকাশনার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। ওই অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদসহ অনেকে ছিলেন।
“অনুষ্ঠানটি নির্বিঘ্নে হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে আমি মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে আসার সময় হঠাৎ ৪/৫ জন ছেলে এসে আমাকে ঘিরে মেঝেতে ফেলে মারতে থাকে।”
অনুষ্ঠান শেষে অন্যরা বেরিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
মাহবুব উল্লাহ বলেন, “আমি একজন শিক্ষক। আমার কোনো শত্রু নেই। যতটুকু প্রয়োজন সেভাবেই কথা বলি। আমি আজ এই হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করছি।
“সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এই ঘটনায় আমি উপলব্ধি করছি, এদেশে কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে জীবন-যাপন করা সম্ভব নয়।”
বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ছাত্রনেতা মাহবুব উল্লাহ ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমদসহ ১১ ছাত্র নেতাদের অন্যতম ছিলেন তিনি।
১৯৭০ সালের প্রথম দিকে মাহবুবউল্লাহ গ্রেপ্তার হন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৬ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন মাহবুব উল্লাহ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দেন তিনি। পরে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ যাত্রা শুরু করলে এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন তিনি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মাহবুব উল্লাহ সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ঘটনার জানার পর মওদুদ আহমেদ হাসপাতালে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহকে দেখতে যান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন।