মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এ কে খন্দকারের ‘সত্য উচ্চারণে’ আওয়ামী লীগের গায়ে ‘আগুন’ ধরেছে- এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 05 Sep 2014, 03:08 PM
শুক্রবার সকালে এক অনুষ্ঠানে সংসদে ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের উপঅধিনায়ক একে খন্দকার তার বইতে সত্য কথা বলতে গিয়ে আজ আওয়ামী লীগের গায়ে আগুন ধরেছে। এতদিন তারা যে মিথ্যাচার করেছে, আজ তা প্রমাণ হয়ে গেছে।”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের উদ্যোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই মিলাদ মাহফিল হয়। ২০০৯ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
সদ্য প্রকাশিত বই ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ তে মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি এ কে খন্দকারের বিরুদ্ধে তথ্য বিকৃত করার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার সংসদে তীব্র সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা।
প্রথমা থেকে প্রকাশিত এ কে খন্দকারের বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হয় বুধবার। বইয়ে তিনি লিখেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ ‘জয় পাকিস্তান’ বলে শেষ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ছিল না বলেও লিখেছেন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা।
ফখরুল বলেন, “কিছুদিন আগেও যিনি তাদের (আওয়ামী লীগ) সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, আজ তারাই এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে বিচারের কথা বলছেন।”
সংসদে বীর উত্তম খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন দলের সাবেক সহকর্মী এ কে খন্দকারের তীব্র সমালোচনা করেন।
এইচ এম এরশাদের সরকারের মন্ত্রী এ কে খন্দকারের সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও।
সংসদে ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “সত্য সত্যই। সত্যের নিজস্ব চেহারা বেরিয়ে আসবেই। এটা কাউকে খাটো কিংবা দোষারোপ করার বিষয় নয়। এ কে খন্দকার তার বইতে যা বলেছেন, তা সত্য। এটাকে মেনে নিতে হবে।”
বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান এ কে খন্দকার বীর উত্তম খেতাবধারী। আওয়ামী লীগের গত মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা যারা ৭ মার্চের ভাষণ সেখানে উপস্থিত থেকে শুনেছি তারা জানি বঙ্গবন্ধু তার ভাষণ শেষ করেছিলেন ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’ বলে। তখনকার বাস্তবতায় এটি ঠিক ছিল। এটা বললে শেখ মুজিবুর রহমানকে খাটো করা হয় না। তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে, তাও নয়।”
আওয়ামী লীগ ইতিহাসের সত্যকে স্বীকার করতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ একজন ছাড়া কাউকে চেনে না। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তারাই সবাই তাদের কাছে অবহেলিত। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের কাছে অবহেলিত। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানির নাম তারা উচ্চারণই করে না।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “এ কে খন্দকার তার বইতে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের কোনো প্রস্তুতি ছিলো না। প্রস্তুতি থাকলে ২৫ মার্চ ও তার পরদিন এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না। তিনি সঠিক কথাই বলেছেন।”
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এম সাইফুর রহমানের কর্মকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করে ফখরুল বলেন, “সাইফুর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। প্রবাসে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছে। ফান্ড সংগ্রহ করেছেন, দেশের জন্য বিদেশি সমর্থন আদায়ে কাজ করেছেন।”
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ তা স্বীকার করে না। এজন্য তার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী একটি শোক প্রকাশ পর্যন্ত করেননি।
বক্তৃতায় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সবল ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সাইফুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করেন বিএনপির এই মুখপাত্র।
মিলাদ শেষে প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সকালে মৌলভীবাজারে মরহুমের কবরে দলীয় নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
বাদ জুমা সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগা জামে মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল এবং বিকালে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে স্মরণ সভা করবে।