আন্দোলনরত তোবা শ্রমিকদের ছয় দফা দাবি আদায়ে আগামী ১৭ ও ২০ অগাস্ট সমাবেশ ডেকেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরাম।
Published : 13 Aug 2014, 04:43 PM
বুধবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, যিনি তোবার শ্রমিকদের সঙ্গে অনশন করেছিলেন।
আন্দোলন থেকে সরে আসতে বিভিন্নভাবে হুমকি ও পুলিশি হয়রানির অভিযোগও সংবা্দ সম্মেলনে অভিযোগ করেন এই শ্রমিক নেত্রী, যার বিরুদ্ধে পোশাক খাত নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করছেন শিল্প মালিকরা।
তোবার শ্রমিকদের পক্ষে আগামী ১৭ অগাস্ট শাহবাগে সংহতি সমাবেশ এবং ২০ অগাস্ট বাড্ডায় শ্রামিক সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরাম।
তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- আন্দোলনরত তোবা শ্রমিকদের ঈদ বোনাস অবিলম্বে পরিশোধ, কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেনের জামিন আদেশ বাতিল, তোবা গ্রুপ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেয়া, নারী শ্রমিকদের ‘নির্যাতনকারী’ বাড্ডা থানার ওসি এম এ জলিলকে গ্রেপ্তার, পুলিশি হয়রানি বন্ধ এবং সারাদেশে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ।
নিজের আরেক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির মামলায় তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার কারাগারে থাকার মধ্যে শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়ে।
বেতন দাবিতে শ্রমিকরা রাজধানীর বাড্ডায় কারখানা ভবনে ঈদের আগের দিন ২৮ জুলাই অনশনে বসলে শ্রমিক নেতারাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিজিএমইএ-এর পদক্ষেপে শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়।এর মধ্যে দেলোয়ার জামিনে মুক্তি পেয়ে ঈদ বোনাস দ্রুততম সময়ে পরিশোধের আশ্বাস দেন।
বিজিএমইএ বেতন দেয়ার বন্দোবস্তের মধ্যে সব পাওনার দাবিতে মিশুর নেতৃত্বে শ্রমিকরা অনশন চালিয়ে গেলে গত ৭ অগাস্ট তাদের পিটিয়ে তুলে দেয় পুলিশ। মিশুকে তখন আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
“তোপখানা রোডে ফোরামের কার্যালয়ে তিন প্লাটুন পুলিশ দিয়ে আটকে রেখেছে। আজও আমাকে ফোন করেছে পুলিশ, আমার বিরুদ্ধে করা পুরাতন মামলার (২০১০ সালের) ওয়ারেন্ট নাকি শাহবাগ থানায় এসেছে।”
বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে তোবা শ্রমিকদের যে বকেয়া দেয়া হয়েছে, সেখানেও অনেক শ্রমিককে প্রাপ্য সব পাওনা দেয়া হয়নি বলে মিশু দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ২০১২ সালে তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিক আমেনা বেগমের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার ছাদ থেকে পড়ে আহত আমেনা প্রায় দুই বছরচিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার হাসপাতালে মারা যান।
পুলিশের শাস্তি দাবিতে ঢাবিতে সমাবেশ
তোবা গ্রুপের অনশনরতদের তুলে দেয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ কয়েকজনের ওপর পুলিশির হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ হয়েছে।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে ‘ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই সমাবেশ থেকে তোবার শ্রমিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদও জানানো হয়েছে।
গত ৬ অগাস্ট তোবার শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফাসহ কয়েকজন।
“সামিনার ওপর হামলা অ্যাক্সিডেন্টালিও হতে পারে। কিন্তু আমরা প্রায়ই দেখতে পাই কোনো কোনো থানার অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরা এমন ঘটনা ঘটায়। তাই হামলকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
হামলার শিকার সামিনা লুৎফা বলেন, “পরিচয় দেয়ার পরও তারা (পুলিশ) আমার ওপর অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করে এবং এক পর্যায়ে লাটিপেঠা করে।”
“একজন শিক্ষক ও গবেষকের নিরাপত্তা যদি পুলিশ দিতে না পারে, তবে পুলিশ কাদের নিরাপত্তার জন্য? তারা কি কেবল মালিকদের নিরাপত্তার জন্য,” প্রশ্ন করেন তিনি।
এই ঘটনায় এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সমালোচনা করেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, “আমরা দেরিতে হলেও ব্যবস্থা নিয়েছি। সমিতির পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে এবং উপাচার্যকে অনুরোধ করা হয়েছে ব্যবস্থা নিতে।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন, অর্থনীতি বিভাগের এ কে মনিরুদ্দিন, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের মসিউর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদকতা বিভাগের গোলাম রহমান, শামীম রেজা, ফাহমিদুল হক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অহিদুজ্জামান প্রমুখ।