তিনি সব সময় অন্যকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন, তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সবার ‘বেবী আপা’- এই বলেই স্মরণ করা হল লেখক-সাংবাদিক বেবী মওদুদকে।
Published : 09 Aug 2014, 09:33 PM
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বেবী মওদুদ স্মরণে এই সভা আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “বেবী মওদুদ ছিলেন বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে এগিয়ে নেয়ার অফুরন্ত সাহস ছিল তার। তিনি ছিলেন সকলের জন্য। অন্যকে সাহায্য করা সবসময় তার কাছে প্রধান্য পেয়েছে। নিজেকে নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকতেন না।”
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ২৫ জুলাই মারা যান বেবী মওদুদ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার সময়ের কথা স্মরণ করে শিরীন শারমিন বলেন, “ভারতে চিকিৎসা করতে যাওয়ার আগে আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “রাওয়ালপিন্ডিতে (পাকিস্তান) থাকার সময়েই বেবীর ভেতরে ধর্মনিরপেক্ষ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা গড়ে উঠেছিল।
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার চেষ্টা ছিলো অদম্য। সকল ক্ষেত্রে তার সচেতনতার পরিচয় ছিল।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেবী মওদুদের বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরে আনিসুজ্জামান বলেন, “কোনোদিন বেবী কোনো তদবির করতেন না। অথচ আমরা সবাই জানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কথা।”
৬০’র দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন বেবী মওদুদের এই শিক্ষক বলেন, “তাকে ছাত্রী হিসেবে পেয়েছিলাম। পরে তার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। সেদিক থেকে বেবী ছিলো আমার আত্মীয়। এমন একজন চলে গেলে যে ছিলো মানুষের মত মানুষ। একজন মানুষের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি।”
মুক্তিযুদ্ধের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার দিনগুলোতেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন বেবী মওদুদ। ১৯৭১ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার আগে ১৯৬৭-৬৮ সময়ে রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সদস্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনেও সোচ্চার ছিলেন বেবী মওদুদ।
স্মরণসভায় সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, “নারী সাংবাদিকতার বিকাশে বেবী মওদুদ শেষ দিন পর্যন্ত সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন অজাতশত্রু। জ্ঞান প্রদীপ হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”
জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বেবী মওদুদের সমগ্র রচনা একত্র সংকলন করে প্রকাশের জন্য বাংলা একাডেমিকে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানান।
সাংবাদিক কল্যাণ ফান্ডের সদস্য সচিব হিসেবে কাজ কাজ করছেন বেবী মওদুদ, যার সভাপতি ছিলেন গোলাম সারওয়ার।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশে বেবী মওদুদের অবদান তুলে ধরে বলেন, “বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হন তখন বেবী ওই বইয়ের সব কাগজপত্র আমার বাসায় রেখে এসেছিল।
“সে বলেছিল, এগুলো যদি সুধাসদনে থাকে তবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তার নিজের বাসার ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছিল।”
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তাদের দাবির পরি্প্রেক্ষিতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বেবী মওদুদের জীবনী ও রচনা সংকলন প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, “সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে বেবী আপা ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। স্বাধীন গণমাধ্যমে বিশ্বাস করতে বেবী আপা।
“তার হাই প্রোফাইল কানেকশন সত্ত্বেও তিনি সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে বেবী মওদুদের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”
স্মরণসভায় ‘স্মরণপত্র’ পড়ে শোনান সাংবাদিক হাসান হাফিজ। আরো বক্তব্য রাখেন বেবী মওদুদের দুই ছেলে রবিউল হাসান অভী ও শফিউল হাসান দীপ্ত, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সংসদ সদস্য রআম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশ সমিতির সভাপতি ওসমান গনি।