উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসনের (অপসারণ) ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
Published : 05 Aug 2014, 02:13 PM
তিনি বলেছেন, বিচারপতিদের অভিশংসন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে উন্নয়নশীল অনেক দেশেই এই ক্ষমতা সংসদকে দেয়া আছে।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউ জিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশে কয়েকটি দেশের উদাহরণ টেনে আনিসুল হক বলেন, “আমাদের এখানে যদি সেই অধিকার (সংসদকে) দেয়া হয় আমার মনে হয় না যে সেটা খুব একটা অমূলক বা অবাস্তব কিছু হবে।”
মঙ্গলবার সচিবালয়ে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন মন্ত্রী।
পরে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’ শীর্ষক ৯৬ অনুচ্ছেদে ২ দফায় বলা হয়- ‘প্রমাণিত ও অসদাচরণ বা অসামর্থের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।’
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগের গত সরকারের মেয়াদে।
২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সংসদ সদস্য হাই কোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। সে সময়ই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তবে বিএনপির অবস্থান এর বিপরীতে।
আইসিটি আইনের সংশোধনী ‘শিগগিরই’
সংশোধিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের খসড়া শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।
তবে সংশোধিত এই আইনে কি কি পরিবর্তন আনা হচ্ছে- সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী কেবল বলেন, “সংশোধনী হওয়ার পরে দেখবেন সেখানে জনগণের দাবির প্রতিফলন হয়েছে।”
যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য বিভিন্ন মহলের দাবি রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দূত স্টিফেন জে র্যাপের অবস্থান আগের চেয়ে নমনীয় হয়েছে বলেও দাবি করেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “উনারা বলেছেন- ডেথ পেনাল্টি হতে পারে… তবে এটাই একমাত্র সাজা কি না তাও জানতে চেয়েছেন।
“আমি বলেছি, ট্রাইব্যুনাল যেখানে প্রয়োজন সেখানে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে যাবজ্জীবনও দিয়েছেন। এটা ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার। তবে প্রসিকিউশনের আইনজীবীরা সব সময় সর্বোচ্চ শাস্তিই চায়।”
আইসিটি আইনের সংশোধন নিয়ে র্যাপের সঙ্গে কথা হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি না তার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলাপের প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে উনি কোনো প্রশ্নও করেননি।”
র্যাপ এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করছেন।
আনিসুল বলেন, “তার সঙ্গে আমার প্রথম বৈঠক হলো। ট্রাইব্যুনালের ব্যাপার নিয়ে উনার যে ধারণা ছিল, তাতে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে বলে তার কথা-বার্তায় বুঝেছি।
“মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বিশ্বে তর্ক-বিতর্ক আছে। তা নিয়ে আমার মতামত জানতে চাইলে আমি তাকে বলেছি- ১৯৭১ সালে বীভৎস এবং অত্যন্ত অন্যায়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি আমরা যথাযথ মনে করি না।”