সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসনের (অপসারণ) ক্ষমতা সংসদকে দেয়ার প্রস্তাব চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন হয়েছে।
Published : 20 Jul 2014, 02:20 PM
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুস আলী আকন্দ রোববার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করেন।
এতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাব কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল চাওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
রিট দায়েরের পর ইউনুস আলী আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানে বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া আছে।
“কিন্তু বিচারকদের অভিশংসনের ভার সংসদকে দিয়ে বিচারকদের বিচার যদি সাংসদদের হাতে দেয়া হয়, তাহলে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না। এটা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা পরে দেয়া হয় ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
সংবিধানের পাঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত হয়। উচ্চ আদালতের রায়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলেও এ বিষয়টি বহাল থাকে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’ শীর্ষক ৯৬ অনুচ্ছেদে ২ দফায় বলা হয়- ‘প্রমাণিত ও অসাদচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।’
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার বিষয়টি জোরেসোরে আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগের গত সরকারের মেয়াদে।
২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সংসদ সদস্য হাই কোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। সে সময়ই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়।
এর আগে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়ও এ নিয়ে আলোচনা হয়। সে সময় ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন করা না হলেও আইন কমিশন গত ২৬ জুন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে একটি সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দেয়।
গত ১৭ জুলাই আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “সংসদের কাছে সকল বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে সার্বভৌম সংসদ হয় না। সংসদের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের জন্যই সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা অনিবার্য।”