উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসনের (অপসারণ) ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার পরিকল্পনাকে সরকারের ‘গভীর ষড়যন্ত্র’হিসাবে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি।
Published : 18 Jul 2014, 09:49 PM
শুক্রবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা মনে করি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করতে সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ন্যস্ত করার এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”
সরকারের এ উদ্যোগ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে ফখরুল বলেন, “দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ ক্ষমতাসীনদের এই অপচেষ্টা প্রতিরোধ করবে।”
২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সংসদ সদস্য হাই কোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। সে সময়ই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে। গত সরকারের সময়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়ও ওই ধারা সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়। তখন তা করা না হলেও আইন কমিশন গত ২৬ জুন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নতুন একটি সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দেয়।
এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “সংসদের কাছে সকল বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে সার্বভৌম সংসদ হয় না। সংসদের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের জন্যই সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা অনিবার্য।”
১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা পরে দেয়া হয় ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
ফখরুল বলেন, “দেশের প্রশাসন, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে নিয়েছে। এখন তারা (সরকার) বিচার বিভাগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে আইন করতে যাচ্ছে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ভাষায়, বর্তমান সংসদ জনগণের ‘নির্বাচিত নয়’ এবং বর্তমান সরকারও ‘অবৈধ’। সুতরাং বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার ‘অধিকারও’ এ সংসদের নেই।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের হবু রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকার্টের বক্তব্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভোট দেয়নি। ওই নির্বাচন সম্পর্কে বিদেশিরা অনেকবার বলেছেন- গ্রহণযোগ্য হয়নি। আজকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত তাদের সিনেট কমিটির সামনে বলেছেন, ওই নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া উচিৎ।”
পুরান ঢাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে চকবাজার থানা বিএনপির আয়োজিত এই ইফতারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন ফখরুল। পুরান ঢাকার বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কয়েকশ নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন।
ইফতারের আগে বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মুক্তি ও আরোগ্যে কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা পিন্টু বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
২০০৯ সালে বিডিআর সদর দপ্তরে ওই রক্তাক্ত বিদ্রোহের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জড়িত ছিলেন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “একে আড়াল করতে সরকার সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে জড়িয়েছে। পিন্টুকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে, কারণ পিন্টু গণতন্ত্রের একজন সৈনিক।”
চকবাজার থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হাজী আনোয়ার পারভেজ বাদলের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে দলের স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনা, ইসলামী ঐক্যজোটের শুরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমেদঅনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।