সাতক্ষীরার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে যে দ্বীপের দখল নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিন দশকের বিরোধ, সেই দক্ষিণ তালপট্টির আর অস্তিত্ব না থাকলেও আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে সমুদ্রের ওই অংশটি ভারতের ভাগেই পড়েছে।
Published : 08 Jul 2014, 06:50 PM
বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নিয়ে নেদারল্যান্ডসের পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশনের (পিসিএ) রায়ের পর মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রলায়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “তালপট্টি এখন নেই। তালপট্টি যে জায়গায় ছিল এ সীমানাটি ভারতের দিকে পড়লেও এর নিচের (দক্ষিণে) বিশাল জায়গায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার জানায়, চব্বিশ পরগনা জেলার হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় একটি নতুন দ্বীপের উৎপত্তি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ল্যান্ড রিসোর্স স্যাটেলাইট ১৯৭৪ সালে যে তথ্য প্রকাশ করে সে অনুযায়ী, ওই দ্বীপের আয়তন প্রায় আড়াই হাজার বর্গমিটার, যা ভাটার সময় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সীমানায় এ দ্বীপের মালিকানা দাবি করে এর নাম দেয়া হয় দক্ষিণ তালপট্টি। অন্যদিকে ভারতও নিজেদের মানচিত্রে এর অধিকার দাবি করে, নাম দেয় পূর্বাশা বা নিউ মুর।
আশির দশকের শুরুতে এ দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত টানাপড়েন নতুন মাত্রা পায়। বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালে একটি যৌথ সমীক্ষার প্রস্তাব দিলেও ১৯৮১ সালে ভারত সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে সেখানে নিজেদের পতাকা ওড়ায়।
এরপর বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের রাজনীতিতেই তালপট্টি ঘুরে ফিরে আসে। ১৯৯০ সালে এক স্যাটেলাইট জরিপের মাধ্যমে দ্বীপটির ক্ষয়ে যাওয়ার খবর দেয় সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে তালপট্টি সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যায়।
আলোচিত এই দ্বীপটির অবস্থান ছিল ২১ ডিগ্রি ৩৭ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯ ডিগ্রি ৮ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। আর হেগের আর্বিট্রেশন ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছে তাতে বাংলাদেশ ও ভারতের সমুদ্রসীমা শুরু হবে ২১ ডিগ্রি ৩৮ মিনিট ৪০.২ সেকেন্ড উত্তর অক্ষাংশ, ৮৯ ডিগ্রি ৯ মিনিট ২০ সেকেন্ড পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে।
এরপর ২১ ডিগ্রি ২৬ মিনিট ৪৩.৬ সেকেন্ড উত্তর অক্ষাংশ, ৮৯ ডিগ্রি ১০ মিনিট ৫৯.২ সেকেন্ড পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ২১ ডিগ্রি ৭ মিনিট ৪৪.৮ সেকেন্ড উত্তর অক্ষাংশ, ৮৯ ডিগ্রি ১৩ মিনিট ৫৬.৫ সেকেন্ড পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ছুঁয়ে এই রেখা অগ্রসর হবে দক্ষিণে। ৮৯ ডিগ্রি ১৩ মিনিট ৫৬.৫ সেকেন্ড পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ১৭৭ ডিগ্রি ৩০ মিনিট দিগংশে (ওই বিন্দু থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রমিত কোণ) এই রেখা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমার সঙ্গে মিলবে।
তালপট্টির বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল কোনো সিদ্ধান্ত দিয়েছে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশের ডেপুটি এজেন্ট ও মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম বলেন, “আপনারা জানেন-এটা একটা বালির দ্বীপ। ১৯৭০ সালে যে সাইক্লোন হয়েছিল, তখন তা উঠেছিল। পরে ১৯৮৫ সালে উড়িরচরে যে সাইক্লোন হয়, তাতে তা বিলীন হয়ে যায়। সে সময় থেকে আর এটা [দক্ষিণ তালপট্টি] আর নেই। ম্যাপে তো দেখতেই পাচ্ছেন আপনারা।
“১৯৮৯ থেকে দ্বীপ বলে কিছু নেই। ২০০৮ সালে ভারতও বলেছে, নিউমুর ইজ নো মোর।”
“আশি সালের আগে যখন দ্বীপ ছিল, তখন দাবি করেছি। এখন তো দ্বীপ নেই। আমাদের কোনো ম্যাপে প্রমাণ করতে পারিনি এটা আমাদের। আমরা ২০১০ সাল থেকে ম্যাপ সংশোধন করেছি।”
এই রায়ে তালপট্টি দ্বীপের এলাকার নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি, যে দলটি সব সময়ই তাদের ভারত সম্পর্কিত এজেন্ডায় ওই দ্বীপের বিষয়টি রেখে আসছিল।
বিএনপি নেতা ও সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই রায়ে বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমায় ভারতের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।