শান্তি কামনায় হাত তুলল লাখো মানুষ

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও দেশের কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2014, 04:22 AM
Updated : 2 Feb 2014, 06:49 AM

রোববার বেলা ৯টা ৫৪ থেকে ১৭ মিনিটব্যাপী এই মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা মো. জোবায়রুল হাসান। লাখো মুসল্লির কণ্ঠে এ সময় ধ্বনিত হয়- ‘আমিন আমিন’।

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের চারপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় সড়ক, সড়কের পাশে বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদ, পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা যানবাহন ও তুরাগ নদীতে নৌকার ওপর অবস্থান নিয়ে মুসল্লিরা এই মোনাজাতে শামিল হন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ঊর্ধ্বতন সামরিক- বেসামরিক কর্মকর্তাসহ শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ মোনাজাতে অংশ নেন।

অবশ্য অন্যবারের তুলনায় আগে আখেরি মুনাজাত হয়ে যাওয়ায় দেরিতে আসা অনেকেই তাতে অংশ নিতে পারেননি।

মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানের দিকে আসেন আশপাশের মুসল্লিরা। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

এরপর আশপাশের সড়ক, অলি-গলিতে অবস্থান নেন মুসল্লিরা। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কামাড়পাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন কয়েক লাখ মানুষ।

আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার টঙ্গী ও এর আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিসে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশের সড়ক, বাসা-বাড়ি ছাড়াও গাজীপুরের চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মাঠ, ভোগড়া মধ্যপাড়া স্কুল মাঠ, নলজানি ওয়্যারলেস মাঠ, ভুরুলিয়া ওয়াপদা মাঠ, কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর, আন্দারমানিক, সফিপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সমবেত হয়ে মোনাজাতে অংশ নেন মুসল্লিরা। সেখানে ওয়্যালেস ও মুঠোফোনে মোনাজাত প্রচার করা হয়। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়।

আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আশা মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরা শুরু করলে টঙ্গীর আশপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।

লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে গত ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব । চারদিন বিরতির পর ৩১ জানুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা।  

এগিয়ে এলো ইজতেমা

গত বুধবার বিশ্বইজতেমার মুরুব্বীরা আগামি বিশ্বইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

আগামী বছর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে ৯ জানুয়ারি, শেষ হবে ১১ জানুয়ারি।

চারদিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় দফা শুরু হবে ১৬ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ১৮ জানুয়ারি শেষ হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বী প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, তাবলিগী প্রচার কাজে সুবিধার জন্য এবার তারিখ এগিয়ে আনা হয়েছে। 

মুসুল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১সাল থেকে টঙ্গীতে দু’দফায় বিশ্বইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ইজতেমার  প্রথম আয়োজন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে। তারপর ১৯৪৮সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।