সংকট নিরসনে জাতিসংঘ দূতের সফরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে চলমান ঘটনাপ্রবাহ ও যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
Published : 11 Dec 2013, 03:24 PM
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ক্যালি ম্যাকার্থি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ তাদের মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়েছে।”
তাদের আলোচনায় কোন কোন বিষয় এসেছে- সে বিষয়ে মুখপাত্র কিছু বলেননি। তবে তার মধ্যে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের বিষয়টিও যে তাতে ছিল, তা জানায় যায় শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বক্তব্য থেকে।
বিকালে গণভবনের ফটকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জন কেরির ‘অনুরোধ পেয়েই’ প্রধানমন্ত্রী সকালে তার সঙ্গে কথা বলেন।
“প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আইসিটি ও উচ্চ আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর করা নিয়ে আলোচনা হয়।
“সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কাঠোর অবস্থান নিয়েও কথা হয়।”
উপদেষ্টা জানান, কেরি বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধ এবং চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংলাপে সম্মত হওয়ায় রাজনৈতিক ঐকমত্যকে কে স্বাগত জানান।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক সংলাপের ওপরও কেরি গুরুত্ব আরোপ করেছেন বলে উপদেষ্টা জানান।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশের প্রধান দুই দলের বিরোধে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর সফরের মধ্যেই দুই নেতার মধ্যে টেলিফোনে এসব বিষয়ে কথা হলো।
গত শনিবার থেকে গত পাঁচদিন ধরে দুই দলকে সমঝোতায় আনতে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত। তার মধ্যস্ততায় মঙ্গল ও বুধবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মুখপাত্রসহ শীর্ষ নেতাদের দুই দফা বৈঠক হয়।
মঙ্গলবার প্রথম দফা বৈঠকের পর ফার্নান্দেজ-তারানকো বলেন, সদিচ্ছার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যেতে এবং সমঝোতার মাধ্যমে উদ্বেগ কমিয়ে আনার বিষয়ে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে।
এদিকে তার এই সফরের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া গতি পায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় মধ্যরাতে আপিল বিভাগের দেয়া ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। তবে চেম্বার বিচারপতির আদেশে গভীর রাতে রায় কার্যকরের বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়।
এরই মধ্যে জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠান জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার নাভি পিল্লাই।
একাত্তরে খুন-ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও নাভি পিল্লাই মনে করছেন, এই বিচারে আন্তর্জাতিক ‘মান’ বজায় ছিল না। সেই সঙ্গে মুত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ না থাকার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে গত সোমবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন দুই বিশেষজ্ঞ এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এদিকে রাজনৈতিক সহিংসতায় একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা বন্ধ করতে বাংলাদেশের দলগুলোর প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে শান্ত থেকে সাধারণ মানুষকে নির্ভয়ে, নিরাপদে তাদের দৈনন্দিন কাজে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে অনুরোধ করা হয়।
জাতিসংঘ দূতের সফরে বড় দুই দল আলোচনায় সম্মত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক উন্নয়নে আমরা অনুপ্রাণিত এবং আমাদের বিশ্বাস, সদিচ্ছার মাধ্যমে প্রধান দুই দল এমন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজে বের করতে পারবে, ঠিক যেমনটি জনগণ চায় এবং যেমনটি তাদের পাওয়া উচিৎ।”
বিবৃতিতে বলা হয়, সব দলেরই অবাধে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে।
“এই সুযোগ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আর বিরোধীদলের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণভাবে এই সুযোগের ব্যবহার করা।”