বিরোধী দলের হরতালের মধ্যে বাস ও ট্রাকে দেয়া আগুনে পুড়েছেন আরো ১২ জন।
Published : 12 Nov 2013, 11:42 PM
এর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মাতুয়াইলে চলন্ত বাসে আগুন দেয়া হলে তাতে আহত হন নয়জন। রাতে গাজীপুরের কালীগঞ্জে একটি ট্রাকে পেট্রোল বোমা ছোড়া হলে অগ্নিদগ্ধ হন এক প্রবাসীসহ তিনজন।
তিন সপ্তাহ ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধের সংখ্যা বাড়ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন।
কয়েকবজন মন্ত্রীর পাশাপাশি মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়ে অগ্নিদগ্ধদের কাছে যান প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি অগ্নিদগ্ধদের দুর্ভোগ দেখে বিরোধী দলের কর্মসূচির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গাড়িতে আগুন দেয়ার এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর দায়ে বিরোধীদলীয় নেতার বিচারও করা হবে।
অন্যদিকে হরতালে এই ধরনের নাশকতার জন্য সরকারের ‘লোকজনকে’ দায়ী করে বিরোধী দলের বক্তব্য, এর উদ্দেশ্য আন্দোলন নস্যাৎ করা।
টানা ৮৪ ঘণ্টার হরতালের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার বেলা সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর প্রবেশমুখ মাতুয়াইলে গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জগামী কোমল পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারি বিভাগের উপ কমিশনার ইলিয়াস শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চলন্ত গাড়িতেই এ আগুন দেয়া হয়। যাত্রীবেশে কেউ পেট্রোল বা গান পাউডার ব্যবহার করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছি।”
বাসে আগুন দেয়ার পরপরই পাশের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সাহায্যে আগুন নেভানোর চেষ্টা হয়। এরই মধ্যে ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা এসে আগুন পুরোপরি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তারা বাসের অগ্নিদগ্ধ নয়যাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। আহতরা হলেন- ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র তারেক আহমেদ (২০), ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী রাবেয়া আকতার (২৪), প্রকৌশলী মো. শুভ (২৯), আব্দুর রহিম (২৬), আব্দুল মান্নান (৩৩), আবু বকর সিদ্দীক (৩০) এবং আবুল কালাম (৪০), খবির হোসেন (৪০) ও আব্দুল হাই (৪৫)।
আহত তারেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডেমরার বাসা থেকে বেরিয়ে চিটাগাং রোডে বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য রায়েরবাগ থেকে বাসে উঠেছিলেন তিনি।
“কিন্তু বাসটি পুনম সিনেমা হল অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে হঠাৎ দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে।”
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুন্সীগঞ্জের আব্দুর রহিম (২৬)। তার শরীরের ৩৭ ভাগ পুড়ে গেছে।
তিনি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে ফুল বিক্রি করেন, থাকেন শনির আখড়ায়। তিন বোন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি ।
বাবা না থাকায় সংসারের মূল চালিকা শক্তি তিনিই বলে জানান রহিমের বোন নাসিমা আক্তার।
গাজীপুরের ঘটনাটি ঘটে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালীগঞ্জের ঘোড়াশাল বাইপাসের মুরগাঁও এলাকায়। সেখানে ট্রাকে ছোড়া পেট্রোল বোমায় তিনজন অগ্নিদগ্ধ হন বলে কালীগঞ্জ থানার ওসি নাজমুল হক ভূঁইয়া জানিয়েছেন।
অগ্নিদগ্ধ বাবুল বেপারি (৩৮), সাইদুল হাজরা (৩৫) ও ইসরাফিল (৩০) কে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
আমিরাতপ্রবাসী বাবুল দেশে ফিরে হরতালে গাড়ি না পেয়ে ট্রাকে চেপে খুলনায় বাড়ির পথে রওনা হয়েছিলেন। তিনি খালিশপুরের মান্নান বেপরীর ছেলে।
ট্রাকচালক সাইদুলের বাড়ি বাগেরহাটের সৈয়দপুরে এবং তার সহকারী ইসরাফিলের বাড়ি ওই জেলার হাকিমপুরে।
ওসি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রাকটি মাছ নিয়ে টঙ্গী এসেছিল। ফেরার পথে ঘোড়াশাল থেকে রড নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বাস না পেয়ে তাতে ওঠেছিলেন বাবুল।
এদিকে হরতালের তৃতীয় দিনে ঢাকার উত্তরা, সদরঘাট, ডেমরা, সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত পাঁচটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আব্দুল্লাহপুরে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। এর এক ঘণ্টা পর উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় একটি বিআরটিসি বাস অগ্নিসংযোগ হয়।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় সদরঘাটে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে, রাত সাড়ে ১০টায় ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে একটি বাসে আগুন দেয়া হয় বলে অগ্নিনির্বাপন বাহিনী জানিয়েছে।
এছাড়াও পুরানা পল্টন, শাহজাহানপুর, শান্তিনগর, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, কারওয়ান বাজায় এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এই ধরনের বিস্ফোরণ সারাদেশেই ঘটছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে রাতে র্যাব ২৭টি তাজা হাতবোমা উদ্ধার করেছে।