সাঁথিয়ায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকুর আত্মীয়কে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় হিন্দুদের ওপর হামলায় জড়িত থাকার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর এক আত্মীয়কে ‘আটকের’ পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2013, 05:03 PM
Updated : 12 Nov 2013, 05:17 PM

তসলিম উদ্দিন খান (৩৫) নামে ওই ব্যক্তির ছোট ভাই মোস্তাক খান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বড়ভাই আব্দুস সাত্তারের জামাতা।  তিনি আতাইকুলা ইউনিয়নের মিয়াপুরের মোসলেম উদ্দিন খানের ছেলে।

পাবনার পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ প্রথমে প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয় তসলিমকে আটকের খবর জানালেও গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মীর্জা আব্দুস সালাম তা অস্বীকার করেন।

প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের জামাতা মোস্তাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাইকে (তসলিম) গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে।”

গত ১ নভেম্বর রাতে উপজেলার বনগ্রাম এলাকার দশম শ্রেণির ছাত্র রাজীব সাহার (১৭) ফেইসবুক পাতায় নবীকে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা দেখা দেয়।

পরদিন কালী পূজার দিনে রাজীব সাহার বাড়িসহ স্থানীয় হিন্দুদের অন্তত ৩৫টি বাড়ি, তিনটি মন্দির ও ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবারও দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যেই বিকালে মিয়াপুর বাজারে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তসলিমকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মিরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় তসলিমকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।”

আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মীর্জা আব্দুস সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তসলিমকে আটক করা হয়নি।”

হিন্দুদের ওপর এই হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের কর্মীদের দায়ী করে আসছে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, সরকারি দলের লোকরা এই কাজ করে এখন বিরোধী দলের ওপর দায় চাপাতে চাইছে।

সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত সন্দেহে সুজানগর উপজেলার পোড়াডাঙ্গা বাজার থেকে মঙ্গলবার দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।

তারা হলেন- বনগ্রাম ৪ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি আব্দুর রহমান খাজা এবং কুমিরগাড়ি গ্রামের মৃত আজহার শেখের ছেলে দুলাল।

কথিত কটূক্তিকারী রাজীবের বাবা বাবলু সাহা ২০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ জনকে আসামি করে আতাইকুলা থানায় মামলা করেনছেন।

এর আগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় স্থানীয় রংধনু ফটোস্ট্যাটের মালিক আমিমুল এহসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে গত ১০ দিনে মোট ১৪ জন গ্রেপ্তার হল।

এদিকে বাবলু সাহার করা মামলার আসামিদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় এই ঘটনার অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন হিন্দু নারী।

এদিকে গ্রেপ্তার জহুরুল ইসলাম নামের এক বিএনপিকর্মী মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আতাইকুলা থানার ওসি রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিচারিক হাকিম লায়লা শারমীনের আদালতে বনগ্রাম মধ্যপাড়ার আমিন উদ্দিন ড্রাইভারের ছেলে জহুরুল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জহুরুলের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি বলেন, হজরত মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে রাজীব সাহার ‘কথিত স্ট্যাটাসে’র একটি প্রিন্টকপি ওই এলাকায় যুবদল সমর্থক হিসেবে পরিচিত খোকন রংধনু ফটোস্ট্যাটের দোকানে এনে প্রথম ফটোকপি করার পর তা এলাকায় ছড়িয়ে যায়।

“বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী- সব দলের কর্মী-সমর্থকরা হিন্দুদের ওপর হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে জহুরুল বলেছে,” বলেন ‍পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল।

এদিকে মঙ্গলবার বিকালে অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলা এবং বাবলু সাহার একটি মামলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মিরাজ।