আবার লোডশেডিং

হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে লোডশেডিং। তীব্র গরম আর ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরমে পৌঁছেছে ভোগান্তি।

রিয়াজুল বাশারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2013, 03:22 PM
Updated : 24 Sept 2013, 03:22 PM

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি। তবে গ্যাস সংকটের কারণে এখনই কোনো আশা দেখাতে পারছেন না তারা।

রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই মঙ্গলবার ছিল বিদ্যুৎ বিভ্রাট। মিরপুর, শ্যামলি, আদাবর, পল্লবী, মোহাম্মদপুর, শান্তিনগর, মহাখালী, রাজাবাজার, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, মতিঝিল, রমনায় গত ১২ ঘণ্টায় ৪ থেকে ৬ বার লোডশেডিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার মানুষজন।

রাজধানীর আদাবরের বাসিন্দা নুসরাত সালাম এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।

বললেন, “একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা। গতকাল রাতেও বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ গেছে। আজও এর কোনো উন্নতি দেখছি না। বাচ্চারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, গরমের কারণে পড়াশোনাও হচ্ছে না।”

মিরপুর বি ব্লকের বাসিন্দা সানিয়া সিরাজ জানান, তাদের সেখানে কতবার যে বিদ্যুৎ গেছে তা তিনি গুণে দেখেননি। তবে চার থেকে পাঁচবারের কম হবে না বলে জানান তিনি।

রাজনৈতিক সচেতন এই গৃহিনী বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন।

“সরকারের এই শেষ সময়েতো এমন হওয়ার কথা নয়। এই সরকার পুরো সময়টা এতো ভালো ভাবে বিদ্যুৎ দিতে পারলে, এখন কেন পারবে না?”

মিরপুরের বাসিন্দা শরিফুল ইসলামের অফিস মহাখালী এলাকায়। বললেন, “সকালে ঘুম ভেঙে দেখলাম কারেন্ট নেই, তাই পানিও নেই। এই অবস্থায়ই অফিসে এলাম। অফিসে এসেও দেখি কারেন্ট যাচ্ছে আর আসছে। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে জেনারেটর দিয়েও কাজ হচ্ছে না।”

শুধু সানিয়া, শরিফুল বা নুসরাত নয়, একই ভাষ্য মিললো আরো অনেকের কাছেই।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ সম্পর্কে পিডিবি বলছে, কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্র সাময়িক বন্ধ থাকায় গত তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন আগের তুলনায় কম হচ্ছে, এরফলে চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ কম বিদ্যুৎ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।

পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উদপাদন কম হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ বাড়লেই উৎপাদন বেড়ে যাবে।”

পিডিবির হিসাবে, মঙ্গলবার সারাদেশে ৬৭৫০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল ৫৭৪০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৯১০ মেগাওয়াটের চাহিদা সামাল দেয়া হচ্ছে লোড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে।

আগের দিন সোমবারও ঘাটতি ছিল ৯৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, “রোজার সময় থেকেই আমরা প্রায় প্রতিদিনই ৬০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। কিন্তু গত তিনদিন ধরে উৎপাদন পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে এসেছে। এ কারণেই লোডশেডিং বেড়েছে।”  

গত ১১ জুলাই দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদন হয় ৬৬৪০ মেগাওয়াট।  

দেশের ৭৫ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস থেকে। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে চাহিদার বিপরীতে ৩৭ শতাংশ গ্যাস কম সরবরাহ করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলার হিসাবে, মঙ্গলবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চাহিদা ছিল ১৩৯ কোটি ৯০ লাখ ঘনফুট গ্যাস। সরবরাহ করা হয়েছে ৮৪ কোটি ৮৬ লাখ ঘনফুট গ্যাস।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কৈলাশটিলার জন্য কিছু গ্যাস সরবরাহ কমেছে। এরপর সার কারখানাগুলো চলছে। সবদিক লক্ষ্য রেখে গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে আমাদের।”

“আমরা পিডিবিকে অনুরোধ করেছি ডুয়েল ফুয়েলের (দ্বৈত জ্বালানি) কেন্দ্রগুলোকে সাময়িকভাবে পুরোপুরি তেলভিত্তিক করে ফেলার জন্য।”

কৈলাসটিলার মালিকানা প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কৈলাশটিলার মেইটেইন্যান্স এর জন্য ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ০২ অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ে মধ্যে আশাকরি ঠিক হয়ে যাবে।”