বর্তমান সংবিধানে থেকেই ‘নির্দলীয়’ কর্তৃত্বে ‘নিরপেক্ষ’ জাতীয় নিবার্চন সম্ভব বলে মনে করেন এক সময়ের বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
Published : 27 Aug 2013, 04:45 PM
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের এই তত্ত্বের পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেছেন তিনি।
গতবছর বিএনপি থেকে পদত্যাগী হুদা তার তত্ত্বের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে নিবার্চন কমিশন পুনর্গঠন করার পরামর্শ দেবেন। আর রাষ্ট্রপতি দুই নেত্রীর সম্মতিতে একজন প্রধান নিবার্চন কমিশনার ও চারজন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী এরপর সংবিধানের ৫৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার নিবার্হী ক্ষমতা নিবার্চনকালীন সময়ের জন্য নবনিযুক্ত প্রধান নিবার্চন কমিশনারের হাতে ন্যস্ত করবেন এবং ৭২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দেবেন। রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিলে সংবিধানের ৫৭ (১) (খ) ও ৫৭ (১) (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য পদ শূন্য হয়ে যাবে।
লিখিত বক্তব্যে হুদা বলেন, সংবিধানের ৫৫ (২) ১১৯ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধান নিবার্চন কমিশনারকে নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ দেবেন। সে অনুযায়ী প্রধান নিবার্চন কমিশনারই প্রধানমন্ত্রীর সব দায়িত্ব পালন করবেন। নিবার্চন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে সরকারের রুটিন কাজগুলো দেখবে নিবার্চন কমিশন।
নিবার্চন কমিশন সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নিবার্চন করবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী আগামী জানুয়ারিতে সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে দশম জাতীয় নির্বাচন হবে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় এই নির্বাচন হবে বর্তমান সরকারের অধীনেই।
কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না দাবি করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বে না।
দুই দলের এই মুখোমুখী অবস্থান মাথায় রেখেই এই নির্বাচনী ‘তত্ত্ব’ হাজির করেছেন নাজমুল হুদা।
বিএনপি ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ওই সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান নাজমুল হুদা। কিন্তু গণমাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ‘রূপরেখা’ দিয়ে তিনি মন্ত্রীত্ব হারান।
বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সে সময় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পক্ষে আন্দোলন করছিল।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার মইনুল রোডের বাড়ি কেড়ে নেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ঈদের আগে হরতাল ডাকে বিএনপি।
এই হরতালের সমালোচনা করে হুদা সে সময় দলের মধ্যে তোপের মুখে পড়েন। ‘দলীয় অবস্থানের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখায়’ খালেদা জিয়া ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর নাজমুল হুদাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন।
এর ছয় মাস পর ‘অনুতপ্ত’ হুদা বিএনপিতে ফেরার আবেদন জানালে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরিয়ে দেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু সংলাপ নিয়ে তার পরামর্শ খালেদা জিয়া আমলে না নেয়ায় এর এক বছরের মাথায় আবারও গণমাধ্যমের সামনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ব্যারিস্টার হুদা।
বিএনপি ছাড়ার পর গত বছরের শেষভাগে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে একটি নতুন দল গড়ার ঘোষণা দেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন পর বিএনএফ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।
বিএনএফ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হুদা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমি তাদের সঙ্গে নেই। আমি বলতে চাই, আমি বিএনপির সঙ্গেই ছিলাম, আছি।”
বিএনপির প্রতীক নিয়ে আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আশার কথাও সাংবাদিকদের বলেন তিনি।
এখন বিএনপির হয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করছেন কিনা জানতে চাইলে হুদা বলেন, “সুপ্রীম কোর্ট বার সমিতির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এ সম্মেলন করছি, বিএনপির নেতা হিসেবে নয়।”