মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদের ফাঁসির রায় আশা করছেন একাত্তরে আল বদর বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত ফরিদপুরের মানুষ।
Published : 16 Jul 2013, 05:16 PM
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার মুজাহিদের মামলার রায় দেবে। তার বিরুদ্ধে সাতটি অপরাধের অভিযোগের চারটিরই ঘটনাস্থল ফরিদপুর।
মুজাহিদের বাড়ি ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায়, যদিও সেই বাড়িতে এখন কেউ থাকে না। তার বাবা মাওলানা আব্দুল আলী একাত্তরে জেলা শান্তি কমিটির ৯ নম্বর সদস্য ছিলেন।
মুজাহিদ নিজে একাত্তরে জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন। আল বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফরিদপুরের স্বাধীনতার পক্ষের যুবকদের মুজাহিদের নির্দেশেই ধরে নিয়ে যাওয়া হত। তিনিই ছিলেন নির্দেশদাতা।”
মাসুদকেও আলবদর বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। শহরের স্টেডিয়ামে স্থাপিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে প্রায় দেড় মাস তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে ছাড়া পেয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
“অসংখ্য মা-বোনকেও এসব ক্যাম্পে নির্যাতিত হতে দেখেছি আমি। এর দায় অবশ্যই অবশ্যই মুজাহিদকে নিতে হবে। তার ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনো রায় আমি চাচ্ছি না।”
মুজাহিদের নির্মম অত্যাচার থেকে একাত্তরে বেঁচে এসেছিলেন শহরের রথখোলা এলাকার বাসিন্দা দুই ভাই বাবু নাথ ও রনজিৎ নাথ। এদের মধ্যে রনজিৎ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যও দিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে এই দুই ভাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজাহিদের নেতৃত্বেই তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
“শুধু এ জন্যই নয়, আরো অসংখ্য মানুষকে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ মুজাহিদ করেছে। এজন্যই তার ফাঁসি চাই আমরা, বলেন রনজিৎ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-ফরিদপুরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান ফরিদ
সেই ঘটনা স্মরণ করে বলেন, মহিউদ্দিনকে আলবদর বাহিনী সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের হানাদার ক্যাম্পে রেখে প্রায় তিন মাস নির্যাতন করে।
“ঘাতকদের অন্যতম হোতা মুজাহিদের ফাঁসি না হলে মহিউদ্দিন ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে না। আমরা তার ফাঁসি এবং ফাঁসিই চাই। অন্য কোনো রায় হলে তা মেনে নেব না।”
ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ভাঙ্গিডাঙ্গি ও মাঝিডাঙ্গি গণহত্যা, মাচ্চর ইউনিয়নের বাকচর ও খলিলপুর গ্রামে গণহত্যা, চরভদ্রাসন উপজেলার বৈদ্যডাঙ্গি গ্রামে একই দিনে অর্ধশতাধিক নারী ও পুরুষকে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে মুজাহিদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, “এসব স্থানে গণহত্যার পেছনে মুজাহিদই ছিল হোতা। ইতিহাসকে কলঙ্কমুক্ত করার এটাই সুযোগ। তার যদি ফাঁসি না হয় তাহলে আর কার ফাঁসি হবে?”
মুজাহিদের ফাঁসির দাবি জানান ফরিদপুরের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আসমা আক্তার মুক্তাও।
এদিকে মুজাহিদের মামলার রায় ঘোষণার পর যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় কুমার বসাক।
শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় আব্দুল আলী ও নূরজাহান বেগমের ঘরে ছেলে মুজাহিদের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট।
ওই দম্পতির আট ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে মুজাহিদ চতুর্থ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মুজাহিদ কয়েকবার ফরিদপুর থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও জেতেননি একবারও।
মুজাহিদের এক ভাই আলী আফজাল মোখলেছ ফরিদপুর পৌর জামায়াতের আমির।