অতীতের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র অব্যাহত রাখার স্বার্থে তিনি আর ‘ওই পথে’ হাঁটবেন না।
Published : 23 May 2013, 10:33 AM
১৯৭৫ এর পর ‘সুশীলদের’ সমর্থনে যেভাবে বার বার সামরিক স্বৈরশাসকরা গণতন্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে, এখনও তেমন আভাস দেখা যাচ্ছে বলে সবাইকে সতর্ক করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা একটি সামান্য নির্বাচন করতে পারে না- তাদের কথা কেনো শুনব?... তাদের কথা শুনলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। দেশ এগিয়ে যাবে না।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদক পাওয়ার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গণতন্ত্রকে জনগণের অধিকার অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “৭৫ এর পর এই সুযোগ ও অধিকার মিলিটারি ডিকটেটররা বার বার ছিনিয়ে নিয়েছে। কিছু শিক্ষিত জ্ঞানীগুণী ও সুশীলরা তাদের সমর্থন দিয়েছে।”
“এখনও দেশে সে ধরনের ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে”, বলেন শেখ হাসিনা।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করায় বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী সাধারণ নির্বাচন হবে। বিরোধী দল বিএনপি এর বিরোধিতায় বলে আসছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে রাজনৈতিক সিহিংসতার আশঙ্কায় দেশের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পক্ষ থেকেও প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের সংলাপের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তিনি নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভাও মানতে রাজি। তবে বিএনপি বলছে, নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হলে তারা সংলাপেও রাজি নয়।
সম্প্রতি একটি শীর্ষস্থানীয় বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত জরিপে বলা হয়, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। এর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ মে বলেন, ওই জরিপ ‘বিভ্রান্তিকর’।
বিগত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ওই পত্রিকার ভূমিকা কী ছিলো- তা কেউ ভুলে যায়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিন মাসের মেয়াদে এসে দুই বছর থাকা সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের প্রথম দুই বছরের তুলনা করার আহবান জানিয়ে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়নি। তখন কোনো রাজনীতি ছিল না।”
“কেন তারা ব্যর্থ হয়েছে? তারা জনগণকে কী দিতে পেরেছিল?”, প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার পরিচালনায় রাজনীতিবিদদের থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গণতন্ত্রকে কীভাবে অব্যাহত রাখতে হয়- তা আমরা জানি।…আমরা দেশে শান্তি চাই। সংঘাত চাই না।”
‘অসাংবিধানিক সরকারের সময়ে’ বাংলাদেশ কোনো কিছু অর্জন করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করেন এবং আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের মীমাংসার করা মনে করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করা সম্ভব।”
‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়’ এবং ‘সকল বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান’ বঙ্গবন্ধুর এই দুই নীতিকে পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হিসাবে গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তার কর্মজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে এ নীতির প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই।”
সরকারপ্রধান বলেন, “অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল আদর্শকে আমরা শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। আইনের শাসনের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আমাদের সাহায্য করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের অংশগ্রহণও একই নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।”
চার দশক আগে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক পাওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “এটি হচ্ছে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরও বিশ্ব শান্তি পরিষদ এর প্রতিবাদ করেছিল।
বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট মোজাফ্ফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিশ্ব শান্তি পরিষদের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ইরাকলিস সাভদারিদিস, ভারতের সাবেক মন্ত্রী ও অল ইন্ডিয়া পিস অ্যান্ড সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রমোদ চন্দ্র সিনহা এবং নেপাল পিস অ্যান্ড সলিডারিটি কাউন্সিলের সদস্য জ্ঞানেন্দ্র বাহাদুর শ্রেষ্ঠা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।