জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীসহ নয় ব্যক্তির অনশনে সংহতি জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
Published : 27 Mar 2013, 02:59 PM
অনশনকারী ‘শহীদ রুমী স্কোয়াডের’ এই সদস্যদের কর্মসূচির সঙ্গে বুধবার একাত্মতা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠনও।
মঙ্গলবার গণজাগরণ মঞ্চের নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর সমাবেশে অসন্তোষ দেখা দেয়।
এর মধ্যেই শাহবাগে অনশনে বসে ‘শহীদ রুমী স্কোয়াড’। তারা অবশ্য বলছেন, গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে বিরোধ থেকে তাদের এই কর্মসূচি নয়।
অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনরত কোনো সংগঠন যে কোনো কর্মসূচি দিতেই পারে এবং তা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
অনশন শুরুর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সেখানে যান ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান। অনশনস্থলে প্রায় ৪৫ মিনিট অবস্থান করে অনশনরতদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
“তারা মূলত গণজাগরণ মঞ্চকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করে একে সফল করার জন্যই অনশনে গেছেন।”
সরকারের সঙ্গে যোগাযোগে গণমাধ্যম ছাড়া গণজাগরণ মঞ্চের বিকল্প মাধ্যম না থাকায় তার মাধ্যমে সরকারকে এই অনশন কর্মসূচির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন শুরুর পর গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচির বাইরে এটাই প্রজন্ম চত্বরে আলাদাভাবে প্রথম কর্মসূচি পালন।
জাতীয় জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে আমরণ অনশনে বসেন সাত শিক্ষার্থী। বুধবার সকালে তাদের সঙ্গে আরো দুজন যোগ দেন।
অনশনকারীরা হলেন- রুমি স্কোয়াডের মুখপাত্র সাদাত হাসান নিলয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শুভ্র, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী আকাশ, এআইইউবি’র শিক্ষার্থী জয়, ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র শরিফুল হক আনন্দ ও রুবাইয়াত দ্বীপ, চাকরিজীবী মানিক সুত্রধর, নারায়ণগঞ্জের স্কুলশিক্ষক আলিফ প্রধান ও ব্লগার সাফি।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনশনস্থলে হয় সংহতি সমাবেশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন জন সংহতি প্রকাশ করে।
সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিসটেম বিভাগের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু বলেন, “এখানকার অনশনকারী শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম ছিল। আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে তারা মনে করছে এ ধরনের একটি কর্মসূচি পালন অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
“শাহবাগ আন্দোলন করে তাদের যে আবেগ তৈরি হয়েছে, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ।”
অনশন কর্মসূচিতে সংহতি জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ, বোধন সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র ফেডারেশন, জাহানারা ইমাম স্কোয়াড প্রভৃতি সংগঠন।
রুমী স্কোয়াডের সমন্বয়ক সাদাত হাসান নিলয় সাংবাদিকদের বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চ থেকে দাবি ওঠার পর আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকারের নির্বাহী আদেশেই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা যায়।
“কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চ তাদের দাবি বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম দিলেও সরকারের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। তাই আমরা অনশনের মতো কঠোর কর্মসূচি শুরু করেছি।”
ওই কর্মসূচির বাইরে এই আলাদা কর্মসূচি পালন করা হলেও এনিয়ে মঞ্চের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই বলে দাবি করেছেন রুমী স্কোয়াডের অন্যতম মুখপাত্র সেঁজুতি শোণিমা নদী।
“আল্টিমেটাম না মানায় পরবর্তী সময়ের জন্য গণজাগরণ মঞ্চের তরফ থেকে যে সব কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং সমর্থন আমাদের আছে। বরাবরের মতোই প্রতিটি কর্মসূচিতে স্কোয়াডের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ থাকবে সক্রিয়ভাবেই।’
গণজাগরণ মঞ্চ রুমী স্কোয়াডের কর্মসূচিতে আনুষ্ঠানিক সমর্থন না দিলেও কোনো বিরোধিতা শুরু থেকে করেনি।
মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসুল বিকালে বলেন, “আমরা আগেই স্পষ্ট ভাষায় বলেছি, শাহবাগ আন্দোলনে অনেক সংগঠন আছে। তারা নিজস্বভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারে।
“তবে গণজাগরণ মঞ্চ সবার সঙ্গে কথা বলে একটি কর্মসূচি ঠিক করায় অনশনের সঙ্গে সরাসরি সমর্থন দিচ্ছে না।”
এদিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচির বিরোধিতা করে ‘ঘেরাও কর্মসূচি’ ঘোষণার দাবিতে বুধবার সন্ধ্যায় প্রজন্ম চত্বরে মশাল মিছিল হয়েছে।
আন্দোলনকারী ১৯টি সংগঠনের মিছিলটি শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি, নীলক্ষেত, কাঁটাবন মোড় ঘুরে শাহবাগে এসে শেষ হয়। মিছিলকারীরা পরে অনশন কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানান।
মিছিলের উদ্যোক্তাদের অন্যতম আহমেদ মুনীরুদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত নিষিদ্ধের গণরায়কে সরকার অগ্রাহ্য করছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়ার চাইতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ আন্দোলনকারীদের দাবি।”
তবে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে এখনো রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মোটেও গণজাগরণ মঞ্চ থেকে আলাদা হইনি। এই ১৯টি সংগঠন এই গণজাগরণ মঞ্চেরই সংগঠন। আমরা বরাবররে মতোই গণজাগরণ মঞ্চের সমস্ত কর্মসূচিতে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে আছি।”