শাহবাগে অনশনে আন্দোলনকারীদের একাংশ

জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে অনশনে বসেছে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের একটি অংশ, যাতে গণজাগরণ মঞ্চ ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে অসন্তোষ স্পষ্ট হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2013, 11:27 AM
Updated : 26 March 2013, 01:47 PM

ছয়জনের একটি দল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টায় শাহবাগে আমরণ অনশনে বসেছে।

তার কয়েক ঘণ্টা আগে সমাবেশ থেকে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

কর্মসূচি ঘোষণার সময়ই সমাবেশ থেকে ‘ঘেরাও-ঘেরাও’ স্লোগান উঠতে থাকে। এক পর্যায়ে একদল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের দাবিতে স্লোগান দিয়ে জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন।

এর মধ্যেই ‘শহীদ রুমী স্কোয়াড’ নামে আন্দোলনকারীদের একটি সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেয়।

রাত পৌনে ১১টা থেকে তারা জাতীয় জাদুঘরের মূল ফটকের সামনে অনশনে বসেন।

এতে অংশ নিচ্ছেন- নিলয়, শুভ্র, আকাশ, আনন্দ, দীপ ও জয়। এরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত।

রুমী স্কোয়াডের সংগঠক সেঁজুতি শনিমা নদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার নামে সরকারের টালবাহানা দেখা হয়েছে।”

গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের শুরু থেকে ‘শহীদ রুমি স্কোয়াডের’ সক্রিয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।

তবে নদী দাবি করেন, গণজাগরণ মঞ্চের ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে অনশন কর্মসূচির কোনো বিরোধ নেই।

তিনি বলেন, “এই আন্দোলনে শহীদ রুমি স্কোয়াড শাহবাগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতিকৃতি স্থাপনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। তার ধারাবাহিকতায় অনশনের এই কর্মসূচি।

“আমরা মনে করি, আমাদের অহিংস আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ধাপ অনশন। আমরা এই কর্মসূচি দিয়েছে এবং তাতে সবার সমর্থন প্রত্যাশা করছি।” 

এদিকে অসন্তোষ প্রকাশকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে সমাবেশে শেষে ইমরান এইচ সরকার মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেন, “আমরা দেখছি, আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি তার বাইরেও অনেকে অন্য কর্মসূচির দাবি তুলেছেন। আমরা ধাপে ধাপে আরো কঠোর কর্মসূচি ভবিষ্যতে ঘোষণা করব।”

তিনি মিছিলকারীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আসেন মঞ্চের সাথে কথা বলেন। আরো কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করব।”

একাংশের অনশন শুরুর পর রাতে মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র মারুফ রসুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যারা অনশন বা অন্য কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন প্লাটফরম থেকে, তার সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের কোনো বিরোধ নেই। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেই তারা রয়েছেন।

“তবে তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্মের ওই আন্দোলন গণজাগরণ মঞ্চের নয়। সেটা একান্তই তাদের নিজস্ব কর্মসূচি। ”

মঞ্চের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, “আজ মুক্তিযোদ্ধা-জনতার মহাসমাবেশ থেকে গণজাগরণ মঞ্চ যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তাতে আমরা অটল ও অবিচল।

“সুতরাং গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার যে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন. সেটা বলবৎ থাকবে।”

ইমরান সমাবেশে ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 

অন্যদিকে সমাবেশের পর মিছিলকারীরা জাদুঘরের ডিভাইডারের সামনে দাঁড়িয়ে ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন।

এসময় সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”

তিনি বলেন, “জনগণ ঘেরাও কর্মসূচি চায়, বাধা দিলে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা হবে।”

ব্লগার মাহাবুব রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নাই। বিন্দুমাত্র বিরোধ নাই। কিন্তু তাদের যে কর্মসূচি আছে, সেখানে আমাদের আপত্তি আছে।”

তিনি আরো কঠোর কর্মসূচি দাবি করেন। ঘেরাও কর্মসূচির দাবিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় শাহবাগ থেকে মশাল মিছিল হবে বলেও জানান তিনি।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ব্লগার বাবু আহমেদ, আনিছ রায়হান, ত্বিষা সায়ন্তনী, রিনভী তুষার প্রমুখ।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর ১৫ ফেব্রুয়ারি টানা অবস্থান কর্মসূচি শেষের ঘোষণা দেয়া হলে সেদিনও আন্দোলনকারীদের মধ্যে মতদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল।

তবে সেই রাতে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুন হলে পুনরায় টানা অবস্থানের ঘোষণা দেন মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

গণজাগরণ মঞ্চের এই আন্দোলনে ব্লগার ও অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট ছাড়াও বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যুক্ত।

পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের কয়েকটি সংগঠনও এই আন্দোলনে সক্রিয়।