সীমান্তে গুলি চালানোর জন্য বাংলাদেশের সমালোচনাবিদ্ধ বিএসএফের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ উঠেছে ভারতেই।
Published : 26 Jan 2013, 07:55 AM
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের দাবি, বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারে সহযোগিতা করছে ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলো থেকে থেকে আসা পুলিশের নথিপত্রসহ সরকারের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিচালক নপরাজিত মুখোপাধ্যায় এই অভিযোগ করেন।
প্রতিবেদনটি গোপনীয় হওয়ায় এই নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি রাজ্যের কর্মকর্তারা।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সীমান্তজুড়ে মানুষের অবৈধ আনাগোনার সঙ্গে বিএসএফের একাংশের সহযোগিতার বিষয়ে ‘সুনির্দিষ্ট বর্ণনা রয়েছে পুলিশ প্রধানের প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অস্ত্র ও মাদক পাচারেও বিএসএফ সদস্যদের মদদ রয়েছে জানিয়ে তা বন্ধে অবিলম্বে বিএসএফ কর্তৃপক্ষের আলোচনার সুপারিশ করেছেন রাজ্যের পুলিশ প্রধান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত মুর্শিদাবাদ থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার খবর পাওয়া গেছে। সীমান্তজুড়ে ব্যাপক এলাকা মানব পাচারকারী ও মাদক পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। তারা বিএসএফের কারো কারো সহযোগিতা পাচ্ছে।”
বিএসএফের পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বংশীধর শর্মা তার বাহিনীর কিছু ইউনিট সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মহাকরণ থেকে এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
“বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এবিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে এখনি রাজি হননি তিনি।
তবে বিএসফের কয়েকজন কর্মকর্তার দাবি, বিএসএফ সীমান্তে মাদক ও গরু পাচার রুখতে কড়া অবস্থান নিলে পুলিশ ও স্থানীয় রাজনীতকরা অসুবিধায় পড়ে যায়।
“যে সব অফিসার কড়া মনোভাব দেখান, তাদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের একটা অংশ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছ,” বলেন এক কর্মকর্তা।
পুলিশ প্রধানের প্রতিবেদনে বিশেষ করে বিএসএফের মুর্শিদাবাদের দুই ব্যাটালিয়ন- ১৩০ ও ১৫১- সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে, যার সঙ্গে আরো দুটি জেলা সংযুক্ত।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গত ৭ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর সেখানকার সীমান্ত-এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিজি-কে একটি রিপোর্ট দেন।
তাতে বলা হয়, সীমান্তে এখন বিএসএফের একাংশই মানুষ পাচারে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে, যে জন্য বিএসএফের কেউ কেউ বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সংশ্রব রাখতেও কসুর করছেন না।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিবদনে ভারতের ভেতরে কয়েক বাংলাদেশির অবৈধ অনুপ্রবেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা বলেছে বিএসএফের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমেই তারা এ দেশে ঢুকেছেন।”
এতে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসী ছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ত্র ও মাদক পাচারের জন্য ক্রমেই পছন্দের রুট হয়ে উঠছে রাজশাহী করিডোর।
পশ্চিমবঙ্গের বিএসএফ ও রাজ্য সরকারের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কোনো ঘটনা না হলেও রাজ্য পুলিশ প্রধানের পক্ষ থেকে বিএসএফের প্রতি সরাসরি অভিযোগের ঘটনা খুবই বিরল।
পুলিশ ক্যাডার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে নপরাজিত ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায়ও কাজ করেছেন। পুলিশ প্রধান হিসেবে পদোন্নতির আগে বামফ্রন্ট সরকারের সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান ছিলেন। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় তার সময়েই সফলতা আসে।
ওই সময় পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত মাওবাদীদের শীর্ষ অধিকাংশ নেতা হয়, নিস্ক্রিয়, নিহত অথবা গ্রেপ্তার হন। এর মধ্যে রয়েছেন মাওবাদী সামরিক কমিশনের প্রধান কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেনজি, যিনি ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হন।