ঢাকা, এপ্রিল ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
পুলিশ এই সাবেক সাংসদের ব্যবহৃত গাড়িটি রাজধানীর মহাখালীর আমতলী ক্রসিং এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। ওই গাড়ির চালক আনসারেরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এই ঘটনায় বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা।
বনানী থানার উপ পরিদর্শক ফায়েজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাত দেড়টার দিকে আমতলি ক্রসিং সংলগ্ন সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের সামনে একটি প্রাইভেট কার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে লোকজন ভিড় করে।
“পরে পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দরজা খোলা অবস্থায় গাড়িটি দেখতে পায়। গাড়ির ভেতরে একটি মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়। ওই ফোনের কললিস্ট ধরে বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি ইলিয়াস আলীর মোবাইল। আর গাড়িটি তার স্ত্রীর।”
ফায়েজুর জানান, পরে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার স্বামী মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুইজন লোকের সঙ্গে ওই গাড়িতে করে বনানীর বাসা থেকে বের হয়ে যান।
“তাহসিনা আমাদের বলেছেন, অনেকবার চেষ্টা করেও তিনি তার স্বামীকে পাননি”, বলেন ফায়েজুর।
স্বামীর নিখোঁজ হওয়া এবং গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তাহসিনা রুশদীর সকালে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ইলিয়াস আলী ও গাড়ির চালক আনসারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।
উপ পরিদর্শক ফায়েজুর বলেন, “বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তাকে খুঁজে বের করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।”
ইলিয়াস আলীর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হন এই বিএনপি নেতা। সে সময় গাড়িতে তার সঙ্গে আরো দুজন ছিলেন।
এর আগে ইলিয়াস তার বাড়ির নিচ তলার অফিসে ৬/৭জনের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেন। কথা শেষে সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি গাড়িতে উঠেন। অন্যরা দুটি মটর সাইকেলে করে সেখান থেকে চলে যায় বলে শফিকুর জানান।
এদের মধ্যে ২/৩ জন ‘নতুন লোক’ ছিলেন উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, অন্যরা এই নতুনদের সঙ্গে ইলিয়াসের পরিচয় করিয়ে দেন।
বনানীর ২/১ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়িটি ইলিয়াস আলীর নিজের। সিলেট ভবন নামের এই বাড়িতে প্রায় দুই মাস আগে পরিবার নিয়ে ওঠেন তিনি। থাকেন ছয়তলা ওই বাড়ির পঞ্চম তলায়।
নবনির্মিত এই বাড়ির ছয় তলায় শুধু একজন ভাড়াটিয়া উঠেছেন। বাকি তলাগুলো এখনো খালি বলে শফিক জানান।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার লুৎফুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফের ডটকমকে বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে সম্ভব সব কিছুই করা হচ্ছে। দেশের সব থানায় ইতোমধ্যে বার্তা পাঠানো হয়েছে। ইলিয়াস আলীর আত্মীয়স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি সর্বশেষ কার কার সাথে মোবাইলে কথা বলেছেন তাও দেখছি আমরা।”
এদিকে এই বিএনপি নেতার নিখোঁজ হওয়ার খবরে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীসহ নেতা কর্মীরা সকালেই ইলিয়াসের বাসায় ছুটে যান।
রুহুল কবির রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসারকে রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা নিখোঁজ হয়েছেন। এটি আতঙ্কের বিষয়। অবিলম্বে তাদের খুঁজে বের করার জন্য আমরা সরকারে কাছে দাবি জানাচ্ছি।”
বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, ইলিয়াসের ভাগ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের মতো কিছু ঘটে থাকতে পারে।
২০১০ সালের ২৫ জুন ফার্মগেইটে ইন্দিরা রোডের সামনে থেকে নিখোঁজ হন চৌধুরী আলম। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি পুলিশ।
অবশ্য পরিবারের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরাই সাদা পোশাকে চৌধুরী আলমকে ধরে নিয়ে যায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এলএইচ/এসএম/জেকে/১৭৩৫ ঘ.