বৃষ্টি-বন্যায় বেহাল সড়কের হাল ফেরাতে চাই ‘২০০ কোটি টাকা’

সাম্প্রতিক বন্যা আর অতিবৃষ্টিতে ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে তা সংস্কারে জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাইছে সড়ক বিভাগ।

ওবায়দুর মাসুম নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2017, 04:16 AM
Updated : 23 Sept 2017, 06:24 AM

বন্যায় সড়কের কোথাও আংশিক ভেঙে গেছে। অনেক জায়গায় পুরো সড়ক হয়েছে বিলীন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতু, কালভার্ট ও ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কও। অনেক জায়গায় পানির তোড়ে ভেসে ড়েছে সেতু ও কালভার্ট।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ শুধু তাদের আওতাধীন মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও জেলা সড়কের ক্ষতির খতিয়ান দিয়েছে; এর বাইরে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকা অনেক রাস্তাও এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ৯টি অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জেলার ২৫৫টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য সওজের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইংয়ে পাঠিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক মেরামতে জরুরি ভিত্তিতে ১৯৩ কোটি ৪৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় সড়ক ও জনপথ অধিদ্প্তর।

কুড়িগ্রামে পানির তোড়ে সেতু গেছে ভেসে (ফাইল ছবি)

গত বছর বন্যা এবং অতিবৃষ্টিজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে ১২০ কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা চেয়েছিল সওজ।

২ হাজার ৩০ দশমিক ১৮ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের হিসাব দিলেও এটা প্রাথমিক চিত্র বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ার পর এ বছরের নভেম্বরে সারাদেশের সড়কগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে। তখন পুরো চিত্র পাওয়া যাবে।

এখন প্রাথমিকভাবে এই অর্থ চাওয়া হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটা নির্দেশনা আছে, সেসব জায়গা বন্যায় ভেসে গেছে সেসব জায়গা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সেখানে ড্রেনেজ, কালভার্ট যাই লাগুক যেন সঠিকভাবে করা হয়।

“বন্যা যখন পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে, বর্ষাটা যখন চলে যাবে, তখন আমরা স্টাডি করে দেখব যেখানে পানির প্রবাহটা গেছে সেখানে ড্রেনেজে স্ট্রাকচার ব্রিজ-কালভার্ট করার প্রয়োজন আছে কি না? যদি থাকে তাহলে সে কাজ করার জন্য আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে।”

বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া সড়কে যানবাহন চলাচল করায় ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী।

মৌলভীবাজারে ডুবে যাওয়া সড়কে চলছিল গাড়ি, তা সড়কের আরও ক্ষতি করেছে বলে সওজ প্রকৌশলী জানান (ফাইল ছবি)

“আমাদের রাস্তাগুলো বিটুমিনাস। বিটুমিনের প্রধান শত্রু হল পানি। পানি যদি দীর্ঘ সময় রাস্তায় জমে থাকায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেহেতু বন্যা হয়েছে, রাস্তাগুলো ফ্লাডেড হয়েছে। রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় ছিল, এর উপর দিয়ে আবার যানবাহন চলাচল করলে ক্ষতি হয় বেশি, এবারও তাই হয়েছে।”

এছাড়া অনেক জায়গায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় পানি জমে রাস্তা ভেঙে গেছে বলে জানান তিনি।

“গত ৫-৬ মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এখনও বৃষ্টিপাত শেষ হয় নাই। এর প্রভাব রাস্তায় পড়েছে।”

এবার বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি কি না- প্রশ্ন করা হলে প্রকৌশলী হাসান বলেন, “প্রতি বর্ষায় এভাবে কিছু ক্ষতি হয়। কিন্তু এবার বন্যায় ক্ষতি বেশি হয়েছে।

“বহু জায়গায় সড়ক ধসে গেছে। রাস্তা টোটালি ওয়াশড আউট হয়ে গেছে বহু জায়গায়। মাঝখানে রাস্তা নাই, ব্রিজ দিতে হবে এমন অবস্থাও হয়েছে। এজন্য আমাদের বাড়তি মেরামত কাজ করতে হচ্ছে।”

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এই সড়ক কুড়িগ্রামের

এবার উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং সিলেট অঞ্চলে সড়কের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

>> রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিলেট অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে বেশি সিলেট ৫২ কোটি ৪০ লাখ চাওয়া হয়েছে

>> রংপুরের জন্য চাওয়া হয়েছে ১৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা

>> রাজশাহীর সড়ক মেরামতে লাগবে ৩৭ কোটি ৬ লাখ টাকা

>> গোলাপগঞ্জের জন্য ৪৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে

>> ঢাকার জন্য ২ কোটি ১০ লাখ টাকা চাইছে সওজ

>> ময়মনসিংহের সড়ক মেরামতে লাগবে ১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা

>> খুলনার জন্য ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে সওজ

>> কুমিল্লার জন্য লাগবে ৫০ লাখ টাকা

>> চট্টগ্রামের জন্য ২১ কোটি ২০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে

সওজের প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার সড়কগুলোর হিসাব দেওয়া হয়নি।