তিনি বলেছেন, “২০১৪ সালে পুনরায় আমরা সরকার গঠন করি। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকার কারণে আজকে সত্যিকারভাবে উন্নয়নটা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছতে পারছে এবং উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে।”
রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জনপ্রশাসন পদক প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন তুলে আসার মধ্যে তিনি আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে জনগণের রায় প্রত্যাশা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের মানুষের ভেতর একটা আস্থা, বিশ্বাস ফিরে এসেছে। এই আস্থা বিশ্বাস যেন মানুষের মনে থাকে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে, সেদিকে সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে এবং যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ঘোষণার পর সারাদেশে সহিংস ঘটনা তুলে দরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল।
“তারপরও আমি ধন্যবাদ জানাই যে আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল সদস্যরা, আমাদের তিন বাহিনী-সকলে মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন দেশে যেন গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকে। যার ফলেই নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হয়।”
‘দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র’ মোকাবেলা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অটুট রাখাই সরকারের লক্ষ্য বলে জানান শেখ হাসিনা।
“আমাদের লক্ষ্য খুব সুষ্পষ্ট। এই বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হবে। কোনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র যেন এখানে স্থান না পায়, যার খেসারত বাঙালি জাতিকে বারবার দিতে হয়েছে, কোনো রকম অপশাসন, দুঃশাসন যেন জায়গা না পায়।”
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বাংলাদেশে হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরুর মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে যে আস্থাহীনতা এসেছিল, ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে তা দূর করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে না পারায় দেশ ‘অনেক ক্ষেত্রে’ পিছিয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারে বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের এখন বিশ্বে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’।
“আজকে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এবং এটা যেন অব্যাহত থাকে। আজকে বাংলাদেশকে আর কেউ করুণার চোখে দেখে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সীমিত সম্পদ দিয়ে ছোট ভূখণ্ডে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর ভাগ্য যে পরিবর্তন করতে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।”
শেখ হাসিনা তার সরকারের লক্ষ্যের কথাও উল্লেখ করেন।
“২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি পালন করব। আর ২০৪১ সালকে আমরা নির্দিষ্ট করেছি বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। আমি বিশ্বাস করি সেটা করা সম্ভব, আমরা করতে পারব। কাজেই সেকথা মাথায় রেখে সকলকে কাজ করবার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।”
সরকারের নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারি কর্মচারীদের অভিনন্দনও জানান।
“আপনারা কাজ করেছেন বলেই এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা চাই এটা অব্যাহত থাকুক।”
একই সঙ্গে তাদের উদ্ভাবনী হতেও আহ্বান জানান তিনি।
“নিজের ভেতরে উদ্ভাবনী শক্তি কী আছে, সেটাও কাজে লাগাতে হবে। নিজেকেই নিজে আবিস্কার করতে হবে। এবং যেখানে যে দায়িত্বপ্রাপ্ত তাকে ভাবতে হবে এটা আমার নিজের দায়িত্ব, দেশটা আমার, দেশের মানুষগুলি আমাদের।”
এসময় তিনি ভিক্ষুকমুক্ত করতে খুলনা জেলা প্রশাসক সেখানকার সরকারি চাকরিজীবিদের একদিনের বেতন দিয়ে যে তহবিল গঠন করেছেন তার প্রশংসা করেন। এ ধরনের ‘উদ্ভাবনী’ উদ্যোগে তার ত্রাণ তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
উদ্ভাবনী চিন্তা ও জনকণ্যানের জন্য জনপ্রশাসন পদক পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেষ্ট এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পদোন্নতি থেকে শুরু করে সবরকম পদক্ষেপ নিয়ে থাকি।
তার সরকারের আমলে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর কথাও এসময় উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ভাষা আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
এছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করা এবং আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ত্যাগ করে ‘জনগণের খাদেম’ হিসেবে কাজ করতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমিও প্রথম সরকার গঠন করেই ঘোষণা দিয়েছিলাম জনগণের সেবক অর্থাৎ খাদেম।
“রাষ্ট্রপরিচালনার মূল লক্ষ্য ও ক্ষমতার অর্জনের একমাত্র লক্ষ্য যে, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, মানুষের জীবন-মান উন্নত করা এবং যে লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন, সেটা সমুন্নত রেখে দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দান করা।”
জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান আরও বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম, জনপ্রশাসন সচিব মোজাম্মেল হক খান।