ফাঁকা ঢাকায় ‘দম ফেলার’ ছুটি

জীবন ও জীবিকার তাড়নায় সারা দেশ থেকে ঢাকায় জড়ো হওয়া মানুষের অর্ধেকই ঈদের ছুটিতে ছুটেছেন গ্রামে; দেড় কোটির বেশি জনসংখ্যার মেগাসিটি ঢাকা কয়েক দিনের জন্য ফাঁকা হয়েছে আবার।

সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2017, 12:17 PM
Updated : 25 June 2017, 12:26 PM

দূরপাল্লার যাত্রী বহনে ব্যস্ত থাকায় ঢাকার রাস্তায় এখন বাসের সংখ্যাও কম; সড়কে চিরচেনা সেই যানজট নেই। ঈদের সরকারি ছুটির প্রথম দিন রোববার মহানগরীর সর্বত্রই সত্যিকারের ছুটির আমেজ। 

এককেন্দ্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসারও প্রধান কেন্দ্র ঢাকা। জীবিকার প্রয়োজনে সারা দেশের মানুষ এখানেই ভিড় করে। ঢাকায় আসা এই মানুষদের পদচারণায় বছরের বাকিটা সময় সরগরম থাকে এই নগরী।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর হিসাবে ৮০ লাখ মানুষ এবার পরিবার, স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছেড়েছেন। গত দুদিন স্টেশনে টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের যে ভিড় ছিল, রোববার তাও অনেকটা কমে এসেছে। 

মহাখালী বাস টার্মিনালে ঢাকা-সিরাজগঞ্জগামী অভি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা বলেন, “যাত্রীরা যারা যাওয়ার, তারা গত দুই দিনে চলে গেছে। আজকে আমাদের এখানে কোনো চাপ নাই। চাপ কিছুটা যা আছে ওই ময়মনসিংহ রুটে।”

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের এনা পরিবহনের কর্মী আল আমিন জানালেন, মহাসগকের কিছু জায়গায় জট থাকায় বাস ঢাকায় আসতে সময় লাগছে। এ কারণে কাউন্টারের সামনে ভিড় বেশি দেখা যাচ্ছে। এমনিতে গত দুই দিনের তুলনায় যাত্রীদের চাপ কম।

গাবতলী টার্মিনালে ফরিদপুর-মাগুরা-বরিশাল-যশোর রুটের দ্রুতি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মিরাজ বলেন, “কালকের তুলনায় আজকে লোক নাই। টিকেট কি বেচব, লোকই পাচ্ছি না।”

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ভোর থেকে তিন ঘণ্টা যাত্রীর চাপ ছিল। সন্ধ্যায় আরেক দফায় কিছু যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছেড়ে যাবে বিভিন্ন গন্তব্যে।

ঈদযাত্রার শেষ দিন রোববার সকালে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়া অধিকাংশ ট্রেনেই ছিল ব্যাপক ভিড়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় কমতে থাকে।

মিরপুরের বাসিন্দা সোহেল হায়দার জানান, পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকে বলে রাজধানীতেই তার ঈদ কাটে। যানজটের এই নগরী ঈদের ছুটিতে অনেকটা খালি হয়ে যায় বলে এই সময়টা তিনি উপভোগই করেন। 

তিনি জানান, “বাসে নিত্যদিনের ঠেলাঠেলি নাই, যানজট নাই। রাস্তায় যাতায়াতে সময়ও লাগে কম। ঈদের সময় মেইন রোডেও রিকশা চলবে। এই সময়টা শহরে ঘুরতে ভালোই লাগে।”   

ধানমণ্ডির বাসিন্দা সাদিয়া ইসলাম রোববার সকালে উত্তরায় এসেছেন বোনের বাসায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যানজটের ভয়ে এদিকে আসা হয় না। আজ যানজট নেই। ধানমন্ডি থেকে উত্তরায় আসতে মাত্র ২৫ মিনিট লেগেছে!” 

ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা আইনজীবী আসিফ আল আমিন বলেন, “এই শহরের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হল যানজট। ‍শুধুমাত্র ঈদের কয়েকটা দিন ঢাকায় শান্তি থাকে।”   

তবে ফাঁকা ঢাকায় সমস্যাও কিছু হচ্ছে বলে জানালেন ব্যাংক কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন।

“এ সময় ট্রান্সপোর্ট পেতে একটু সমস্যা হয়। বাস কম থাকে, সিএনজিঅলারাও অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকে। যাদের নিজের গাড়ি আছে, তারা ছাড়া সবার জন্য অবস্থাটা স্বস্তিদায়ক নাও হতে পারে।”

ব্যাবসায়ী আমিনুল ইসলাম থাকেন আদাবরে। দেশের বাড়ি টাঙ্গাইলে হলেও ঈদে যাওয়া হয় না বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন।

“আমরা তিন ভাই, ‍দুই ভাই দেশের বাইরে থাকে। টাঙ্গাইলের বাড়িতে আছেন এক ফুপু থাকছেন। মা যতদিন ছিলেন- ঈদে টাঙ্গাইল যেতাম। এখন ঢাকাতেই ঈদ করি।”

ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাস্তায় স্বস্তির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই সময়টায় একটু দম ফেলা যায়। সারা বছর এমন শহর তো পাই না।”