ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসের পরদিন শুক্রবার উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলের বাস যাত্রীরা স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন; তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটে কিছুটা দুর্ভোগে পড়ার সঙ্গে তাৎক্ষণিক টিকেটে অতিরিক্ত দাম গুণতে হয়েছে যাত্রীদের।
Published : 24 Jun 2017, 12:36 AM
রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। কিছু গাড়িতে ‘অল্প’ সময় দেরি হলেও এটাকে ঈদযাত্রার ক্ষেত্রে ততোটা ‘ভোগান্তি’ হিসাবে দেখছেন না যাত্রীরা।
কয়েকজন কাউন্টার ব্যবস্থাপক জানান, যানজট থাকলেও তা অন্য ঈদের মতো অতো বেশি নয়। আগের দিনে যাওয়া বাস ফিরে আসায় তাদের ঝামেলায় পড়তে হয়নি।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলছেন, এবারের ঈদযাত্রা বিগত কয়েক বছরের চেয়ে স্বস্তিদায়ক হচ্ছে।
বিকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিদর্শনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গাড়ির চাপে মহাসড়কে চলাচল ধীরগতিতে হলেও কোথাও যানজট নেই।
“এবারকার ঈদে ঘরমুখো যাত্রা অন্যান্য কয়েকবারের চেয়ে অনেক ভালো এবং আমি বলব, স্বস্তিদায়ক।”
আতিকুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগেই টিকেট কাটা ছিল তাদের। পরিবারের আরেক সদস্যকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে এবার স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।
“সাধারণত ঈদের সময় এক-দেড় ঘণ্টা দেরি হলে সেটা ওভাবে চোখে পড়ে না। ঢাকার ভেতরের যানজটের কথা ভেবে একটু আগেই বাস থেকে বের হয়েছি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত বাস ঠিক সময়ে গিয়েছে বলে জেনেছি। দেখি অপেক্ষা করে।”
অগ্রিম টিকেট নিয়ে শিক্ষক আতিকুর রহমান বাসের অপেক্ষায় থাকলেও এনজিও কর্মকর্তা শাহেদুল ইসলাম কাউন্টারে এসেই টিকেট পেয়েছেন। দ্রুতি পরিবহনের খুলনাগামী বাসের টিকেট বাড়তি দামে কিনে কিছুটা খেদ প্রকাশ করলেও টিকেট পাওয়ায় খুশির কথা জানান তিনি।
জটের কথা চিন্তা করে অনেক আগেই মুগদার বাসা থেকে গাবতলীর পথ ধরেন জনশক্তি ব্যবসায়ী আবদুস সাত্তার। চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের আড়াইটার বাস ধরতে সোয়া ১২টায় কাউন্টারে পৌঁছে যান তিনি।
সাড়ে ১২টার দিকে কাউন্টারে বসে সাত্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালের গাড়িগুলো ঠিক সময়ে গেছে। ওদের গাড়িতে কোনো দেরি হয়নি এখন পর্যন্ত। আমারটাও টার্মিনালে আছে। ঠিক সময়ে যাবে। যানজট হবে ভেবে একটু আগেই বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম।”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অগ্রিম টিকেট আগে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখনো টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। আমিও পাব। ভাড়া অনেক বেশি নিচ্ছে। অন্য সময়ে ৪০০ টাকা হলেও এখন ৫৩০ টাকা।”
এসআর ট্রাভেলসের কল্যাণপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমানের দাবি, বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া-ই নিচ্ছেন তারা। অন্য সময়ে আসা-যাওয়া দুই সময়েই গাড়ি যাত্রী পূর্ণ থাকায় সেই ভাড়া নেওয়া হয় না। এখন ফিরতি যাত্রায় যাত্রী না থাকায় তারা ‘বিআরটিএ’র ভাড়া-ই’ নিচ্ছেন।
বিকেল ৫টায় শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারে অপেক্ষার সময় কথা হয় সাগর ইসলামের সঙ্গে; ওই সময়েই রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা তার বাস।
সাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্য সব গাড়ি ঠিক সময়ে গেছে। আমারটাও একটু পর চলে আসবে। বেশি দেরি হবে বলে মনে হচ্ছে না।”
ঈগল পরিবহনের যশোরমুখী বাসে অগ্রিম টিকেট হাতে গাবতলীর টার্মিনালে অপেক্ষায় ছিলেন ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নুরুজ্জামান। অন্যান্য বাস ঠিক সময়ে ছেড়ে যাওয়ায় নিজের সন্ধ্যা ৬টার বাসের ক্ষেত্রেও একই আশা দেখছিলেন তিনি।
“আগের সব বাস নির্ধারিত সময়ে গিয়েছে। আমারটাও হয়ত যাবে । পাটুরিয়া ঘাটে যানজট হয় কি-না সেই চিন্তায় আছি।”
পাটুরিয়ায় দিনে ফেরি পারের অপেক্ষায় দীর্ঘ জট তৈরি হলেও রাতে তা কমে যায়।
বিকাল সাড়ে ৫টায় কল্যাণপুরে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ব্যবস্থাপক এ কে এম রইসুল ইসলাম সবুজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তায় যানজট আছে অনেক। যানজটে কিছুটা দেরি হলেও গাড়ি ফিরতে পারছে। আমরা সে অনুযায়ী শিডিউল করে গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
ওই কাউন্টার থেকে গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া ও রাজশাহীর গাড়ি ছাড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঈদের ঝামেলার কথা বিবেচনা করে আমরা এবার ট্রিপ কমিয়ে রেখেছি। সে কারণে নির্ধারিত সময়ে গাড়ি কাউন্টার ছাড়ছে।”
শ্যামলী পরিবহনের অন্য সব গাড়ি ঠিক সময়ে ছেড়ে গেলেও ফিরতে না পারায় সাড়ে ১১টার বাস ছাড়তে দেরি হয়েছে বলে জানান সেখানকার কাউন্টার ব্যবস্থাপক ও যাত্রীরা।
এ বিষয়ে শ্যামলী পরিবহনের রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের কাউন্টার মাস্টার জাকির হোসেন বলেন, “ওই গাড়িটা রাজশাহীর নয়নপুর যায়। কালকে সেখানে পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। আজকেও জ্যামের কারণে দেরি হচ্ছে। আসলে ছেড়ে দিব।”
এদিকে সকালের দিকে গাবতলী ও কল্যাণপুর বাস কাউন্টারগুলোতে মানুষের ঢল নামলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে তা কিছুটা কমে আসে। সন্ধ্যার পর আবার বাড়ে যাত্রীর সংখ্যা।