ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে ২৮ যুবককে গ্রেপ্তারের সময় ‘সমকামিতার অভিযোগ’র কথা বললেও তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেছে র্যাব।
Published : 20 May 2017, 06:52 PM
র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার এই যুবকদের চারজনকে শনিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে মাদক আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বাংলাদেশে সমকামীরা নানা হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগের মধ্যে শুক্রবার রাতে কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজারের ছায়ানীড় কমিউনিটি সেন্টার থেকে ওই তরুণদের আটক করে র্যাব-১০ এর একটি দল।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ২৮ যুবককে আটক করা হয়। তারা নিজেদের সমকামী বলে ‘স্বীকার করেছে’।
শনিবার পুলিশ তাদের যখন ঢাকার আদালতে নিয়ে আসে, তখন তাদের মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ওই আদালতে প্রসিকিউশন পুলিশের প্রধান পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ থানার এসআই এসএম মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার যুবকদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার আসামি হিসেবে ১৬ জনকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চান।
মাদক আইনে মামলার বিষয়ে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর মাতুব্বর শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযানের সময় তারা সেখানে সমকামিতায় লিপ্তরত ছিল বা মিলিত হয়েছিল, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
“তাদের মাদক সেবনরত অবস্থায় কিছু মাদকসহ পাওয়া যায়। তাই তাদের মাদক আইনের মামলায় আদালতে চালান করা হয়েছে।”
তবে ওই যুবকরা দুই মাস অন্তর প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ওই কমিউনিটি সেন্টারে ‘সমকামিতার উদ্দেশ্যে’ জড়ো হতেন বলে স্থানীয়দের কাছে অভিযোগ পেয়ে ওই অভিযান চালিয়েছিলেন বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়া হলেও বাংলাদেশের আইনে ‘প্রকৃতি নির্ধারিত নিয়মের বাইরে গিয়ে’ যৌন সম্পর্ককে দণ্ডনীয় অপরাধ বিবেচনা করা হয়েছে।
মামলাটি মাদক আইনে হলেও এই যুবকদের রিমান্ডের আবেদনে আবার সমকামিতার কথা উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান।
এতে বলা হয়, “তাদের কাছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাওয়া গেছে। এরা প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌনাচারের জন্য ওই কমিউনিটি সেন্টারে মিলিত হত। একজনের ফেইসবুক আইডি থেকে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ার আহ্বান জানান হত। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই চক্রের সদস্যদের সম্পর্কে আরও তথ্য জানা প্রয়োজন।”
সৈয়দ শাহ আলমসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করে আসামিদের জামিন চান।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবীর বাবুল রিমান্ড আবেদন সমর্থন করেন।
শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাইরুজ তাসনীম জামিনের আবেদন নাকচ করে চার আসামির দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এছাড়া ১২ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে তাদের কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়।