বড়হাটে অভিযান স্থগিতের পর ফের গুলি-বিস্ফোরণ

দিনভর দফায় দফায় গুলি ও বিস্ফোরণের পর মৌলভীবাজার শহরের বড়হাটে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে সোয়াটের ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্থগিত করা হয়েছে।

বিকুল চক্রবর্তী মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2017, 02:06 PM
Updated : 1 April 2017, 03:02 AM

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে শনিবার সকালে আবার অভিযান শুরু করতে চান তারা।

অভিযান স্থগিত করায় সোয়াট সদস্যরা ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে সরে গেলেও পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা গত দুদিনের মতই পুরো এলাকা ঘিরে আছেন। তার মধ্যেই রাত ৮টার পর দুই দফা গুলি এবং কযেকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় ওই বাড়ির দিক থেকে।

শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে অভিযান শুরুর পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে দোতলা ওই বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার-সিলেট মহাসড়কে সাংবাদিকদের সামনে আসেন মনিরুল।

তিনি বলেন, “ধারণা করছি প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে। এই অপারেশনটি অপেক্ষাকৃত একটু জটিল, কেননা যে বাড়িটিতে তারা অবস্থান নিয়েছে, সেই বাড়িটিতে অনেকগুলো কামরা রয়েছে এবং আরও একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিং রয়েছে।

“তো সেই কারণে অভিযান সমাপ্ত হতে আরও একটু সময় লাগবে। আগামীকাল সকাল থেকে আবহাওয়া ভালো থাকা সাপেক্ষে পুনরায় এই অভিয়ানটি শুরু হবে।” 

ভেতরে একাধিক জঙ্গি থাকতে পারে এমন ধারণা দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, সন্ধ্যার আগে সোয়াট সদস্যরা ওই বাড়ির ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে ভেতর থেকে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটানো হয়।

এরপর বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দিনের মত অভিযান স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন পুলিশ কর্মকর্তারা। 

মনিরুল ছাড়াও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল এবং হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্রসহ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। 

অডিও: মৌলভীবাজারের বড়হাটে মুহুর্মুহু গুলি-বিস্ফোরণের শব্দ

‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’

গত বুধবার ভোরে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা বড়হাট আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসা গলির ওই ডুপ্লেক্স বাড়ি ঘিরে ফেলার পর সেদিনই আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ।

প্রথম দিন থেকেই ওই বাড়ির দিক থেকে থেমে থেমে গুলি ওই বিস্ফোরণে শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়ির বিভিন্ন দিকে রেকি করে অভিযানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে সেখানে বেশ কিছুক্ষণ গুলি চলে। এর মধ্যেই পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদেরও তৎপর হতে দেখা যায়।

সকাল ৮টার দিকে সোয়াট ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা সেখানে পৌঁছান। পৌনে ১০টার দিকে শুরু হয় তাদের চূড়ান্ত অভিযান ‘অপারেশন মেক্সিমাস’।

এরপর বেশ কিছু সময় থেমে থেমে গুলির শব্দ পাওয়া যায় এবং বেলা ১১টার দিকে একটি বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। পরে তিন তলা ওই বাড়ি থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।

বেলা সোয়া ১২টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা টানা গুলির আওয়াজ আসতে থাকে ওই বাড়ির দিক থেকে। ওই সময়ের মধ্যে তিন দফা বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। এর পরপরই এক পুলিশ সদস্যকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

মৌলভীবাজার থানার ওসি অখিল উদ্দিন পরে সাংবাদিকদের জানান, আহত পুলিশ সদস্যের নাম কয়সর আহম্মেদ, তিনি জেলা পুলিশের কনস্টেবল।

“সে অপারেশনে ছিল। পাশের সৈনিক গুলি করার সময় একটি খোসা ছিটকে কয়সরের গলায় লাগে এবং রক্ত বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

অভিযান চলার মধ্যেই দুপুরের দিকে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের সামনে আসেন মনিরুল।

তিনি বলেন, সিলেটের অভিযানের সূত্র ধরেই গত বুধবার ভোররাতে মৌলভীবাজারের দুটি জঙ্গি আস্তানা চিহ্নিত করেন তারা।

“আমাদের কাছে খবর রয়েছে, এখানে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক এবং একজন বিস্ফোরক এক্সপার্ট রয়েছে। সে কারণেই এখানে অপারেশন সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।”

এদিকে গত তিন দিন ধরে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

তাদের যাওয়া আসায় যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা।

তার ওপর গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় রান্না-খাওয়া নিয়েও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। 

 

নাসিরপুরের পর বড়হাট

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে আতিয়া মহল নামের এক বাড়িতে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দলের দীর্ঘ অভিযানের রেশ না কাটতেই বুধবার ভোরে মৌলভীবাজারের বড়হাট এবং সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুরে দুটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে ফেলার খবর আসে।

প্রায় ১৮ কিলোমিটার ব্যবধানে ওই দুই বাড়ির মালিক সাইফুল ইসলাম নামে লন্ডন প্রবাসী এক ব্যক্তি। জুয়েল নামে তার এক আত্মীয় ওই বাড়ির দুটি দেখভাল করে আসছিলেন।

জুয়েলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাহফুজ নামের এক ব্যক্তি তিন মাস আগে নাসিরপুরের বাসাটি ভাড়া নেন। আর বড়হাটের বাড়ির ভাড়াটের নাম বেলাল।

ঢাকা থেকে সোয়াট সদস্যরা পৌঁছানোর পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় শুরু হয় ‘অপারেশন হিট ব্যাক’।

সেই অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে এক ব্রিফিংয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, বাড়ির ভেতরে সাত থেকে আটজনের ছিন্নভিন্ন দেহ পেয়েছেন তারা।

মনিরুলের ধারণা, নিহতরা নব্য জেএমবির সদস্য এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে।