তার ধারণা, নিহতরা নব্য জেএমবির সদস্য এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে।
পৌর এলাকার বড়হাটের অন্য জঙ্গি আস্তানা এখনও ঘেরাও করে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা শেষে সেখানে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন মনিরুল।
বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, অভিযান শেষে ভেতরে প্রবেশ করার পর বাংলো ধাঁচের বাগান ঘেরা ওই টিনশেড একতলা বাড়ির প্রবেশপথসহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ছড়িয়ে রাখা হয়েছে।
“সেগুলো সরিয়ে, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিস্ক্রিয় করার পরই মূলত ওখানে ঢোকা সম্ভব হয়। ঢুকে আমরা যে বিভৎস চিত্র দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশ ছড়ানো… সেই চিত্র ধারণ করতে পারলেও আপনারা প্রচার করতে পারবেন না- এতোটাই বিভিৎস।”
“আমরা যেটা ধারণা করছি, কাল যখন সোয়াট প্রথম অভিযান শুরু করে, যখন তারা দেখে যে পালনোর কোনো পথ নেই, তখনই সম্ভবত তারা সপরিবারে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহনন করেছে।
“ডেডবডির বিভিন্ন অংশ, কোনো বডি আসলে আক্ষত নাই, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটো রুম জুড়ে ছড়িয়ে আছে। সেগুলোর মাথা, পা, একেকটা একেক জায়গায়। সেগুলা মিলিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, সাত-আটটি ডেডবডির অংশবিশেষ হতে পারে ।”
তবে ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা লাশের অংশগুলো মিলিয়ে দেখার পরই নিহতের সঠিক সংখ্যা জানা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“আমাদের মনে হয়েছে, সাত থেকে আটটি সেখানে ছড়িয়ে আছে, বিভিন্ন বয়সের। পুরুষ আছে, মহিলা আছে, দুই একজন অপরিণত বয়স্কও থাকতে পারে। কারণ কোনো কোনো হাত বা পা দেখে আমাদের সেই রকমই মনে হয়েছে।”
এর মধ্যে মৌলভীবাজার পৌর এলাকার বড়হাট আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসা গলির বাড়িটি একটি ডুপ্লেক্স ভবন।আর সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুরের বাড়িটি একতলা টিনশেড।
প্রায় ১৮ কিলোমিটার ব্যবধানে ওই দুই বাড়ির মালিক সাইফুল ইসলাম নামে লন্ডন প্রবাসী এক ব্যক্তি। জুয়েল নামে তার এক আত্মীয় ওই বাড়ির দুটি দেখভাল করে আসছিলেন।
জুয়েলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মাহফুজ নামের এক ব্যক্তি তিন মাস আগে নাসিরপুরের বাসাটি ভাড়া নেন। আর বড়হাটের বাড়ির ভাড়াটের নাম বেলাল।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ কমিশনার মহিবুল ইসলাম বুধবার জানিয়েছিলেন, বাড়ি ঘেরাওয়ের পরপরই ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরে দুটি বাড়ি থেকেই থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় দিনভর।
বিকালে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট পৌঁছানোর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বৃষ্টির মধ্যেই নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় শুরু হয় ‘অপারেশন হিট ব্যাক’।
রাত ১১টার দিকে র্যাবের শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক এএসপি মো. মাইনুদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আলোর স্বল্পতার কারণে অভিযানে বিরতি দেওয়া হয়েছে, ভোরে আবার শুরু হবে।
কিন্তু ভোররাতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে অভিযান আরও বিলম্বিত হয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবার অভিযান শুরুর পর ড্রোন পাঠিয়ে ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং পরে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা ভেতরে থাকা বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করেন।
অভিযানের তথ্য জানাতে পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসানকে সঙ্গে নিয়ে বিকালে ব্রিফিংয়ে আসেন কাউন্টার টেররিজমের মনিরুল।
সীতাকুণ্ড ও সিলেট অভিযানের সময় জঙ্গিদের আত্মঘাতী হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মনিরুল বলেন, নাসিরপুরেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন তারা।
“এই কৌশল তাদের নতুন নয়। যখনই তারা দেখে যে আর কোনো পালানোর পথ নেই, তখনই তারা আত্মসমর্পণ না করে পুলিশ বা র্যাব বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা না দিয়ে আত্মহত্যা বা নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা যেটা আপনারা দেখেছেন, এ ক্ষেত্রেও সেটা আমরা দেখছি।”
তবে এই রাতে সেখানে অভিযান হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি একটি ঘণবসতি পূর্ণ এলাকা। রাতে অভিযান চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ভোরে আলোর সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করা হতে পারে। সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ শেষে অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
নসিরপুরের জঙ্গিদের পরিচয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, “আমরা যেহেতু একটা সূত্র ধরে অনুসন্ধান করছিলাম, সেহেতু আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে নব্য জেএমবির সদস্যরাই এখানে আত্মগোপন করেছিল।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আগের দিন বলেছিলেন, বড়হাটে তিন থেকে চারজন এবং নাসিরপুরে আরও দুই-একজন বেশি আছে বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন তারা।
তবে অভিযানে অংশ নেওয়া একটি বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ওই বাড়ির কেয়ারটেকার জুয়েলের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, নাসিরপুরের ওই বাড়িতে এক দম্পতি, গৃহকর্তার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং তাদের তিন সন্তান ছিলেন।
অন্যদের মধ্যে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার শাহ জালাল এবং র্যাবের শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের কমান্ডার সিনিয়র এএসপি মাঈনউদ্দীন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।