বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ সোমবার আলোচিত এ মামলার আপিল রায়ের এই দিন ঠিক করে দেয়।
নিম্ন আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষে গত ৯ জানুয়ারি এই বেঞ্চ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।
সোমবার রায়ের দিন ঠিক করে দেওয়ার সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর ১০ দিনের মাথায় ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে বাড়ির কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।
২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানীসহ অন্য ছয় আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
জহিরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন, আসামিদের আপিলের পাশাপাশি ব্লগার রাজিবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন আসামিদের শাস্তি বৃদ্ধির জন্য ক্রিমিনাল রিভিশন (শাস্তি পুনর্বিবেচনা) করেছিলেন।
“সেসবের শুনানি গত ৯ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। আজ আদালত রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২ এপ্রিল তারিখ ঠিক করে দিয়েছেন।”
রাজীবের বাবার করা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
নিষিদ্ধ জঙ্গি দল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানী এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ছাত্রকে সেখানে আসামি করা হয়। ওই বছরের ১৮ মার্চ অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচার শুরু করে আদালত।
ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ এ মামলার রায়ে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যদের কারাদণ্ডাদেশ দেন।
রায়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র পলাতক রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসির আদেশ হয়। ওই দুজনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ আসে।
অন্যদের মধ্যে মাকসুদুল হাসান অনিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বাকি পাঁচজনের মধ্যে এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীকে ৫ বছরের কারাদণ্ডসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে আরও দুমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক।
আর সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে ৩ বছরের কারাদণ্ডসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
রাজীব হত্যার পর গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক মিলে আরও অনেক হত্যাকাণ্ডে আনসারুল্লাহর সম্পৃক্ততা পুলিশের তদন্তে উঠে আসে। এর মধ্যে রাজীব হত্যার রায়ই প্রথম হয়।
হত্যার উসকানিদাতা হিসেবে মুফতি রাহমানীর যে দণ্ড হয়েছিল, তাতে অসন্তোষ জানিয়ে রাজীবের বাবা নাজিম বলেছিলেন, রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন।
এ কারণে কারাদণ্ড পাওয়া আসামিদের শাস্তি বৃদ্ধির জন্য ক্রিমিনাল রিভিশনের আবেদন করেন তিনি। অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ অনুমোদনের জন্য হাই কোর্টে আসে। সাজার রায় পাওয়া বাকি আসামিরা আপিল করেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির জানান, নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুজনের মধ্যে রানা পলাতক থাকায় আপিল করার সুযোগ পাননি। হাই কোর্টে এ মামলার শুনানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
শুনানির শেষ দিন জহির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “রানা ছাড়া বাকি সাত আসামিই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল। ওই জবানবন্দি ও তাদের আনুষাঙ্গিক সাক্ষ্যের ওপর আমরা (উভয় পক্ষ) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। যুক্তিতর্কে শাস্তি বহাল রাখার দাবি জানানো হয়েছে। আশা করি আসামিদের শাস্তি বহাল থাকবে।”