গ্যাসের দাম বাড়ানো আটকাতে আদালতে আবেদন

বিইআরসি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে দাবি করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একটি আবেদন হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2017, 03:21 PM
Updated : 27 Feb 2017, 04:12 PM

ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের পক্ষে প্রকৌশলী মোবাশ্বের হোসেন সোমবার হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন। এতে গ্যাসের দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতার উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।

আবেদনকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চে এর শুনানি হতে পারে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গৃহস্থালিতে ও গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়।

আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার বিল দুই ধাপে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার বিল ৯৫০ টাকা করা হয়। মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের গ্যাসের বিলও ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সিএনজির দাম বাড়ানো হয় ১৪ শতাংশের বেশি।

ক্যাবের আইনজীবী সাইফুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এক নোটিসে দুইবার দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে, যেটা অবৈধ।

“তাছাড়া ‘এনার্জি রেগুলেটারি কমিশন আইন ২০০৪’ অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ দিনের মধ্যে দাম ঘোষণা করার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যেটা করলেন, সেটা কোনো ব্যবস্থাপনার মধ্যে পড়ে না।”

এছাড়া বিইআরসি ট্যাক্স-ভ্যাট যুক্ত করে জনগণের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়েই তা করেছে বলে দাবি এই আইনজীবীর।

এসব বিষয় উল্লেখ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চেয়ে রোববার বিইআরসি চেয়ারম্যানকে আইনি নোটিস পাঠানো হলেও তা জবাব না পাওয়ায় আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আবেদনে জ্বালানি সচিব ও বিআরসি চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।

মানববন্ধন

হাই কোর্টে আবেদনের পাশাপাশি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ক্যাব।

কর্মসূচিতে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, “এই যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেই আদেশ স্থগিত করা হোক, গ্যাসের মূল্য অপরিবর্তিত রাখা হোক।”

গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করে এই খাতের উন্নয়নে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, “গ্যাস খাত একটি দুর্নীতিগ্রস্ত খাত, এখানে অপচয় আছে, দুঃশাসন আছে এবং দুর্নীতি আছে।

“গ্যাস খাতের এই অনিয়ম, দুঃশাসন ও দুর্নীতি যদি কমানো যায় তাহলে ‘সাপোর্ট ফর শর্টফল’ নামে বিইআরসি যে উদ্ভুত তহবিল গঠনের আদেশ দিয়েছে তার কোনো প্রয়োজন ছিল না।”

গ্যাস খাতকে সম্পূর্ণভাবে ভ্যাটমুক্ত রেখে গ্যাসের দাম ভোক্তা-জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সরকারের নীতি-নির্ধারকদের উদ্দেশে গোলাম রহমান বলেন, “আপনারা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনীতির চাকা স্থবির করে দেবেন না। আপনারা আপনাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতিকে চাঙ্গা করবেন না, যদি মুদ্রাস্ফীতি একবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে।”

তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে ওয়াসার পানির মুল্য ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, এখন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হল, ভবিষ্যতে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করবে শোনা যাচ্ছে।

“তারপর অকারণে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হল, চালের মূল্যে অস্থিরতা, মাংসের মূল্য অস্থিরতা, এসব কীসের আলামত, কীসের ষড়যন্ত্র? আমরা চিন্তিত।”

হাই কোর্টে রিট আবেদনে পক্ষে আদেশ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন গোলাম রহমান।