গ‌্যাসের দাম: চুলায় দুই ধাপে বাড়ছে ৩০০ টাকা

বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতার মধ‌্যেই গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার, যা কার্যকর হবে মার্চ ও জুন মাসে দুই ধাপে।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 11:22 AM
Updated : 23 Feb 2017, 02:38 PM

আবাসিক গ্রাহকদের আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে, যা এতোদিন ছিল যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা

আর দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য মাসিক বিল ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা হবে।

গৃহস্থালিতে মিটারে যারা গ‌্যাসের বিল দেন, তাদের মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ‌্যাস ব‌্যবহারের জন‌্য ৯ টাকা ১০ পয়সা এবং জুন থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সা করে দিতে হবে। এতোদিন প্রতি ঘনমিটারে তাদের বিল হত ৭ টাকা করে।

অর্থাৎ, রান্নার গ‌্যাসের জন‌্য চুলাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রতি মাসে ৫০ শতাংশ এবং মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের ৬০ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ হবে।

যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব‌্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম ১ মার্চ থেকে হবে প্রতি ঘনমিটারে ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩৮ টাকা হবে। আর ১ জুন থেকে হবে ৪০ টাকা।

এই হিসাবে গাড়ির গ‌্যাসের জন‌্য মালিকদের খরচ বাড়বে ১৪.২৮ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়বে গণপরিবহনে। রাস্তায় নামলেই তার মাসুল দিতে হবে যাত্রীদের।   

বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম

পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ‌্যক খাতেও গ‌্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত, যার ফলে শিল্পোৎপাদনে খরচ বাড়বে, ব‌্যবসায়ীরাও তা তুলবেন দ্রব‌্যমূল‌্য বাড়িয়ে দিয়ে। শেষ বিচারে ভোক্তাদের পকেট থেকেই তা যাবে।  

বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই ঘোষণা দেয়।

বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম জানান, সব মিলিয়ে গ‌্যাসের দাম এবার গড়ে ২২.৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তারা।

অন‌্য খাতে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে হবে:

খাত

বর্তমান দাম

১ মার্চ থেকে

১ জুন থেকে

দুই ধাপে বাড়ছে

বিদ্যুত খাত

২ টাকা ৮২ পয়সা

২ টাকা ৯৯ পয়সা

৩ টাকা ১৬ পয়সা

১২%

ক্যাপটিভ পাওয়ার

৮ টাকা ৩৬ পয়সা

৮ টাকা ৯৮ পয়সা

৯ টাকা ৬২ পয়সা

১৫%

সার

২ টাকা ৫৮ পয়সা

২ টাকা ৬৪ পয়সা

২ টাকা ৭১ পয়সা

৫%

শিল্প

৬ টাকা ৭৪ পয়সা

৭ টাকা ২৪ পয়সা

৭ টাকা ৭৬ পয়সা

১৫.১৩%

চা বাগান

৬ টাকা ৪৫ পয়সা

৬ টাকা ৯৩ পয়সা

৭ টাকা ৪২ পয়সা

১৫.০৩%

বাণিজ্যিক

১১ টাকা ৩৬ পয়সা

১৪ টাকা ২০ পয়সা

১৭ টাকা ০৪ পয়সা

৫০%

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়িয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত গণশুনানি করে বিইআরসি। এর ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার নতুন দামের ঘোষণা এল।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব বিইআরসির শুনানিতেই গ‌্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছিল। বৃহস্পতিবার দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর এ সংগঠনের সভাপতি দুদকের সাবেক চেয়ারম‌্যান গোলাম রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা আদালতে যাওয়া কথা ভাবছেন।

“এনার্জি রেগুলেটারি কমিশন আইন ২০০৪ অনুযায়ী, প্রতিটি এনার্জি প্রোডাক্টের দাম নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। সেখানে ভোক্তাস্বার্থ, উৎপাদনকারীর স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। গণশুনানির মাধ‌্যমে প্রত‌্যেক পক্ষের কথা শুনে পণ‌্যের দাম নির্ধারণ করতে হয়। কিন্তু সর্বশেষ গণশুনানিতে কমিশনের কেউ অংশ নেননি। একদিন তাদের একজন সদস‌্য কেবল উপস্থিত ছিলেন।”

ওই শুনানিতে বিতরণ কোম্পানিগুলো যেসব যুক্তি এসেছে, তাতে গ‌্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন ক‌্যাব সভপাতি।

“তাছাড়া গণশুনানির ৯০ দিনের মধ‌্যে দাম ঘোষণা করার কথা রয়েছে ওই আইনে। সেই ৯০ দিন তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আসলে মূল‌্য নির্ধারণের মূল ভিত্তি হল ন‌‌্যায‌্যতা ও যৌক্তিকতা। ফলে কমিশন দাম বৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটা অযৌক্তিক। ভোক্তা অধিকার এতে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে আমি মনে করি।”