গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ-প্রশ্ন

দুই বছরের মধ‌্যে গ‌্যাসের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা যেমন খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে; তেমনি গাড়িতে ব‌্যবহৃত সিএনজির তুলনায় গৃহস্থালিতে দাম বেশি বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 04:34 PM
Updated : 23 Feb 2017, 07:58 PM

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সমিতির (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, বিইআরসির গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তারা।

বৃহস্পতিবার বিকালে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ওই ঘোষণা আসার পর ফেইসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। যেখানে বাসাবাড়িতে সময়মতো গ্যাস পাওয়া যায় না, সেখানে চুলাপ্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তাদের। কেউ কেউ বলছেন, গ্যাস চুরি বন্ধ করতে না পেরে তা পোষাতে পকেট কাটা হচ্ছে সাধারণ মানুষের।

এতে রপ্তানি বাণিজ্যে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

গ্যাসের দাম বাড়াতে সরকারি বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গত অগাস্টে কমিশন শুনানির আয়োজন করলে ভোক্তাদের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হয়।

এরপর বৃহস্পতিবার গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে, যা দুই ধাপে (মার্চ ও জুন থেকে) কার্যকর হবে।

বর্ধিত দামে রান্নার গ্যাসের জন্য চুলাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রতি মাসে ৫০ শতাংশ এবং মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের ৬০ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ হবে। গাড়িতে ব্যবহার করা সিএনজি ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়ে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, “আইন অনুযায়ী, প্রতিটি এনার্জি পণ্যের দাম নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। সেখানে ভোক্তাস্বার্থ, উৎপাদনকারীর স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।

“গণশুনানির মাধ্যমে প্রত্যেক পক্ষের কথা শুনে পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে হয়। কিন্তু সর্বশেষ গণশুনানিতে কমিশনের কেউ অংশ নেননি। একদিন তাদের একজন সদস্য কেবল উপস্থিত ছিলেন।”

ওই শুনানিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে যেসব যুক্তি এসেছে, তাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন ক্যাব সভপাতি।

 তিনি বলেন, “তাছাড়া গণশুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দাম ঘোষণা করার কথা রয়েছে ওই আইনে। সেই ৯০ দিন তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

 “আসলে মূল্য নির্ধারণের মূল ভিত্তি হল ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা। ফলে কমিশন দাম বৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটা অযৌক্তিক। ভোক্তা অধিকার এতে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে আমি মনে করি।”  

গোলাম রহমান বলেন, কমিশন গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত থেকে যদি সরে না আসে, তাহলে যে কারও উচ্চ আদালতে যাওয়ার অধিকার রয়েছে।

ক্যাব আদালতে যাবে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমরা ভাবছি, যথাসময়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”

গ্যাসের দাম বাড়ানোর কঠোর সমালোচনা করে কুড়িল কুড়াতলী এলাকার বাসিন্দা মীর মো. মোকাব্বের হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার গ্যাস চুরি বন্ধ করতে পারছে না। আর সিএনজিচালিত যানবাহন মালিকদের সুবিধা দিতে গিয়ে আবাসিক গ্রাহকদের ওপর চাপ তৈরি করছে।

“আমি এখন দেই ৬৫০ টাকা (দুই চুলার জন্য)। আমাকে দিতে হবে ৯৫০ টাকা। তার মানে প্রায় পঞ্চাশ ভাগ দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সিএনজির দাম তো সরকার অতো বাড়ায়নি। যারা গাড়ি চালায় তারা কি তেলে চলতে পারে না? না পারলে তারা গাড়ি চালাবে না। তাদের জন্য আমরা কেন গ্যাসের দাম বেশি দেব? তিতাস গ্যাস চুরি বন্ধ করুক। এসব না করে সাধারণ মানুষের ওপর এসব চাপানোর মানেটা কি?”

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক সাংবাদিক ফেইসবুকে লিখেছেন, “সারাদিন চুলায় আগুন জ্বলে না, তারপরেও বেশি দাম কেন দেব?”

আরেকজন লিখেছেন, “গ্যাস দেয়ার মুরোদ নাই, তার ওপর দাম বাড়ানো।” 

গ্যাসের দাম বাড়ানোয় উৎপাদন খরচ বেড়ে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। 

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রপ্তানি খাতের জন্য সরকারকে প্রণোদনা দেওয়া উচিৎ। তা না হলে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়বে।”

তবে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে বলে মনে করছেন মাতলুব।

“গ্যাসের দাম বাড়বে এটা আমরা জানি। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাংলাদেশের তিনগুণ বেশি। এলএনজি যখন আসবে তখন একবারে তিনগুণ না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে বাড়াটাই ভালো।”

তবে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলছেন, “এই সিদ্ধান্তের ফলে পুরো সাপ্লাই চেইন প্রভাবিত হবে। কাপড়, সুতা, বোতাম থেকে শুরু করে সব ধরনের কাঁচামালের দাম বাড়বে। ফলে যে মূল্যে পোশাক উৎপাদিত হবে তা বিক্রির বাজার খুঁজে পাওয়া যাবে না।”

তিনি বলেন, “গত দুই বছরে পোশাক রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় ছিল। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এতোদিন কঠিন ছিল, এখন সেটা অসম্ভব হয়ে পড়ল।”

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে ‘গণবিরোধী’ সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

“মোটা বাজেটের অর্থ জোগান দিতে জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের পকেট কেটে বল্গাহীন রাজস্ব আহরণের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে,” প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।