আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক উন্নয়নে খেলাধুলার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রীড়াবিদদের নিজ নিজ দেশের দূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
Published : 23 Feb 2017, 02:40 PM
বৃহস্পতিবার চতুর্থ রোল বল বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “এই খেলাধুলার মাঝে আমি মনে করি, একটা দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে অন্য দেশের খেলোয়াড়দের একটা মতবিনিময়ের সুযোগ হয়, একটা বন্ধুত্বের সূচনা হয়।
“‘ট্র্যাক থ্রি ডিপ্লোমেসি’র এই সময়ে খেলাও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। আঞ্চলিক সম্পর্ক আরো মজবুত হয়।”
এবার বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন প্রথমবারের মতো ঢাকায় ১৭ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘চতুর্থ রোল বল ওয়ার্ল্ড কাপ- ২০১৭’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩৯টি দেশ ও সর্বোচ্চ ৬২৫ জন প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম চত্বরে ‘শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে’ চতুর্থ রোল বল ওয়ার্ল্ড কাপে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে বিজয়ী ভারত এবং রানার্স-আপ ইরানের খেলোয়াড়দের মেডেল পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারত ও ইরানের দুই দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফিও তুলে দেন তিনি।
টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছেন ১৩ বছর বয়সী বাংলাদেশি খেলোয়াড় হৃদয়। বাদাম বিক্রির পাশাপাশি আবাহনী মাঠে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন হৃদয়।
তার হাতে ‘বেস্ট প্লেয়ার অব দ্যা টুর্নামেন্ট’র ট্রফি ও সর্বোচ্চ স্কোরারের এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার ছোট ভাইয়ের নামে ‘শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন করেন।
‘রোল বল স্কেটিং’ খেলাটি বাংলাদেশে এখনও তেমন পরিচিত ও জনপ্রিয় না হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে এবারের আয়োজনের মধ্য দিয়ে খেলাটি পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
“এই খেলাটি বাংলাদেশে খুব পরিচিত না। আমাদের আরো উদ্যোগ নিতে হবে, রোল বল খেলাটি যেন আরো পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে যেন ছড়িয়ে দিতে পারি, সে সুযোগটা আমাদের সৃষ্টি করতে হবে”, যোগ করেন তিনি।
এজন্য এই খেলার সঙ্গে জড়িতদের বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘রোল বল স্কেটিং’ প্রতিযোগিতায় পুরুষ প্রতিযোগীদের পাশাপাশি নারী প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ নারী-পুরুষের সমতা ও সমঅধিকার অর্জনের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।
রোল বল স্কেটিং ভারতে শুরু হলেও এটি বর্তমানে ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের যুব সমাজ যেন আরো সম্পৃক্ত হয়, সেজন্য আমার প্রত্যেকটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম এবং জেলাগুলোতে স্টেডিয়ামের সাথে সাথে সুইমিংপুল নির্মাণসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে যাচ্ছি। খেলাধুলার প্রতি যেন ছেলেমেয়েরা আরো আগ্রহী হয়।”
স্কুল পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিয়োগিতার আয়োজন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখান থেকে পারদর্শিতা অর্জন করে আমাদের আগামী দিনের খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে।”
ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ক্রীড়া শিক্ষা প্রশিক্ষণ, বিশেষায়িত ক্রীড়া শিক্ষা প্রশিক্ষণ এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়নের সামগ্রিক পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “পদ্মার চরে আমরা একটা ভালো ও উন্নতমানের ক্রীড়া পল্লী তৈরি করব। যেখানে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতা এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এমনকি, আমরা একটি অলিম্পিক কমপ্লেক্সও সেখানে তৈরি করতে চাচ্ছি।
“আমরা মনে করি, যুব সমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের আসক্তি থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা একান্তভাবে জরুরি।”
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের প্রথমবারের মত আইসিসি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০০ সালে বিশ্বের দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলও ওয়ান-ডে স্ট্যাটাস অর্জন করেছে।
অষ্টম সাফ গেমসে বাংলাদেশ ফুটবল দলের স্বর্ণ পদক লাভ করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “হকি, শ্যুটিং, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল, আর্চারি, জিমন্যাস্টিক্স ও বিচ ফুটবলসহ বিভিন্ন ইভেন্টে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।”
বিভিন্ন খেলার সাথে জড়িত রেফারি, প্রশিক্ষণ ও পুষ্ঠিবিদদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ এবং তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি দেশীয় সব খেলা যেন নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়, সেজন্য ক্রীড়াঙ্গনে জড়িতদের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এরপর শেখ রাসেলকে নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি গানের সাথে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিবসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোলা তার স্থিরচিত্র বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হয়।
অতিথিদের বক্তৃতার আগে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ‘ও আলোর পথযাত্রী’ গানটি গান। গানের সঙ্গে দলগত নৃত্য পরিবেশিত হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বাস্তবায়নের মূখ্য আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ সব ক্রীড়া ফেডারেশন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলোর আর্থিক বরাদ্দ অত্যন্ত তিনগুণ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য আর্থিক বরাদ্দ অত্যন্ত অপ্রতুল। ফেডারেশন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার আর্থিক বরাদ্দ এত কম যে, নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা অনেক সময় সম্ভব হয় না।”
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিরদার বক্তব্য রাখেন।
পুরস্কার বিতরণীর আগে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘কারার ওই লৌহ কপাট’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ এবং ‘বাংলাদেশের ঢোল’ গানের সঙ্গে কোরিওগ্রাফ হয়।