ভারত সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শত যুবার সঙ্গে এই আয়োজনে অংশ নেয় গুজরাট টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া তরুণ-তরুণীরা বৃহস্পতিবার দুপুরের পর পৌঁছেন গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
সেখানে প্রথমে তারা একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশ নেন। বাংলাদেশ প্রথমে গোল করে এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে হেরে যায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। গুজরাটি রাগে ‘মা সরস্বতী সাদরে’ শীর্ষক আরতি গান পরিবেশনের মাধ্যমে এই পর্ব শুরু হয়।
এরপর গুজরাটের নিজস্ব ঢংয়ে ‘বুশ না ভান মা থায়ে ভাটো পাবানানি’ শীর্ষক স্বাগাম সংগীত পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরশাভি বুচ এককভাবে ‘মিমিক্রি’ নিয়ে আসেন।
এরপর চিত্রাঙ্কন করতে মঞ্চে উঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয়দীপ বানাদ। শুরু থেকে এই আঁকিয়ের বিষয়বস্তু সবার কাছে অস্পষ্ট থাকলেও কয়েক মিনিট পর বোর্ডটি উল্টে দিলে দেখা যায়, সেটা আইনস্টাইনের ছবি।
তুমুল করতালিতে এই চিত্রকরকে অভিনন্দন জানান সবাই।
এরপর গুজরাটের এসএস ভাউনগরের বাসিন্দা এক শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে স্থানীয় সংগীত নিয়ে শিক্ষার্থীরা। রবিন জোসেফ নামে এক শিক্ষার্থী এরপর একটি একক পরিবেশনা নিয়ে আসেন, যেখানে তিনি মুখ দিয়েই বিভিন্ন যন্ত্রের সুর তোলেন।
এরপর গানে গানে দলীয়ভাবে গুজরাটের স্থানীয় নাচ ‘গারবা’ পরিবেশন করা হয়। পরে ফের সাগম সংগীত নিয়ে আসেন শিল্পী স্বীকৃতি শাহ।
গুজরাটিদের পর মঞ্চে উঠেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রতিনিধি দলের শিল্পীরা।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের মাধ্যমে এই পর্ব শুরু করে বাংলাদেশের শিল্পীরা। ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’, ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’, ‘ওরে নীল দরিয়া আমায় দেরে দে ছাড়িয়া’, ‘আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে’ নানা গান।
শেষের দিকে ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’, ‘সোহাগ চাঁদ বদনী ধ্বনি নাচো তো দেখি’ পরিবেশনের সময় আসন ছেড়ে উঠে আসেন গুজরাটের শিক্ষার্থীরাও; মঞ্চের সামনে নেচে তারাও অংশ নেয় গানের তালে।
পরে আবৃত্তি নিয়ে আসেন আরিক আনাম খান, কাজী নজরুল ইসলাম ও মাহিদুল ইসলাম। সাজু রায়সহ দুজন মিলে পরিবেশন করেন ‘সেলফলেস সেলফি’ শীর্ষক মাইম পরিবেশনা।
মিলনায়তনের সর্বশেষ আয়োজন দলীয় নৃত্যে অংশ নেন বাংলাদেশ ও গুজরাটের ১০ নারী শিল্পী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছিনে মাহতারিমা শারমীন, নাজিবা বাশার, প্রিষুতি চাকমা, শারমিন জুয়াইরিয়া ইনা ও উম্মে সালমা সোমা। গুজরাটের পক্ষে অংশ নেন রিয়া, জিনাল, ফোরাম, ভূমি ও হেমানি।
উদ্বোধনী পর্বে গুজরাট টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. রাজুল গাজ্জার বলেন, এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগে দূরে যোগাযোগ-বন্ধুত্ব করা হয়। কিন্তু সামনাসামনি দেখা হয়ে করা বন্ধুত্ব না হলে সেটা ঠিক এখনও টেকসই হয় না।
“আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আসা যুব প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের একটা পথ তৈরি হল। আমি আশা করি, এটা কেবল আজকের এই দিনের যোগাযোগে আটকে থাকবে না। বরং জীবনকালব্যাপী বন্ধুত্ব তৈরি করবে।”
বাংলাদেশের পরিবেশনা দেখার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পী আরশাভি বুচ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের গান এতটা ভালো লাগবে, আগে বুঝতে পারিনি। আজ এই পরিবেশনা দেখেই বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাহানি সিনেমায় অমিতাভ বচ্চন ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে’ গানটি গেয়েছিলেন। আর কোনো বাংলা গান কখনো শোনা হয়নি।
“আজ প্রথমবার শুনে রীতিমত বিস্মিত হয়েছি। আফসোস হচ্ছে, আগে কেন এ দিকে মনোযোগ দেইনি।”
বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শ্বেতা বাম্বুওয়ালার সঞ্চলনায়, ভারত সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি ইন্দু ভূষণ লেঙ্কা, কমল কুমার কর, ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের প্রতিনিধি কল্যাণ কান্তি দাশও অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন।
দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার দুপুরে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে পৌঁছান বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। দুদিন দিল্লি, আগ্রা ঘুরে বুধবার এই দলটি আহমেদাবাদে পৌঁছে। বৃহস্পতিবার সকালে তারা অমরাবতি নদীর তীরে গান্ধী আশ্রমে যান।
কলকাতা হয়ে আগামী রোববার এই দলের বাংলাদেশে ফেরার কথা রয়েছে।