ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্যই হল বাদ দেওয়া: নাহিদ

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার মান যাচাই করা যাবে না মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন, ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্যই থাকে পরীক্ষার্থীকে বাদ দেওয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2016, 10:38 AM
Updated : 26 Oct 2016, 05:35 PM

ফুটপাত থেকে বই সংগ্রহ করে ভর্তি পরীক্ষায় ওইসব বইয়ের লেখকদের নাম জানতে চাওয়া হয় বলেও মন্তব‌্য করেছেন তিনি।

সচিবালয়ে বুধবার এক সভা শেষে নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “ছেলেমেয়েদের গুণগত মান বাড়ছে না যারা বলছেন তারা সঠিক বলছেন না। (মান) বাড়ছে তবে যা বাড়া উচিত, করা উচিত সেটির জন্য আমরা সংগ্রাম করছি। চেষ্টা করছি, লড়াই করছি, সেজন্য আমাদের সেই মানের শিক্ষক দরকার।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এবার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘উত্তীর্ণ’ হয়েছে। অন্য ইউনিটেও হার প্রায় একই রকম।

২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তিযোগ্য মাত্র তিনজন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়, পরে ভর্তির শর্ত শিথিল করে আসন পূরণ করা হয়।

পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হারের সঙ্গে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ‘ফেলের’ খবরে তাই শিক্ষার মানের প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে একটি আসনের বিপরীতে ৪০ জনের আবেদন করার কথা জানিয়ে নাহিদ বলেন, “ওখানে পাস-ফেইলের ব্যাপার নাই। এক ঘণ্টায় তারা বাছাই করছেন কীভাবে ৩৯ জনকে বাদ দেওয়া যায়। ৩৯ জনকে বাদ দেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরিজে বিভাগে ভর্তি হতে মাত্র তিনজনের পাস করার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, তিনি বলেছিলেন তিনজনকেই ভর্তি করা হোক। কর্তৃপক্ষ পরে আসন পূর্ণ করে।

“একজন শিক্ষক আমাকে বলেছেন, নীলক্ষেতের ফুটপাতে অনেক ধরনের বই বিক্রি হয়- গান, জারি, নাচ, ছড়া, কবিতা নানা ধরনের বই। তারা নিজেরোও এসব বই দেখেন নাই। কয়েকটা বই তুলে নিয়ে এসে ওই বইয়ের লেখক কে- এ ধরনের প্রশ্ন (ভর্তি পরীক্ষায়) দেয়, (উত্তর) তারাও জানেন না। তার তো উদ্দেশ্য পাস-ফেল না, তাদের উদ্দেশ্য ৩৯ জনকে বাদ দেওয়া, একজনকে রাখা। এখানে পাস-ফেলের প্রশ্ন না, বিভ্রান্তি হচ্ছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তিযোগ্য মাত্র তিনজন শিক্ষার্থীকে পাওয়ার পরেও ওই বিভাগে ভর্তি হওয়া অনেকে কী করে ‘ফার্স্ট ক্লাস মার্কস’ পাচ্ছে সেই প্রশ্ন তোলেন নাহিদ, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে ক্রটিপূর্ণ বলেছিলেন।

“এসব জিনিস ছেলেমেয়েদের হতাশ করে এবং ভুল মেসেজ চলে যায়। আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি। আমাদের পরীক্ষার উপর অন্যদের আস্থা কমে যাবে। এই বিষয়টা সঠিক না, এটা বাছাই পরীক্ষা।”

মন্ত্রী বলেন, “বাছাই করতে গেলে আমি ৯৯ পেয়েছি এই খবর যদি পাই আমি শিওর হয়ে যাব যে আমি পাস করেছি, কিন্তু নেবে একজন। দেখা গেল আরেকজন একশ পেয়ে গেছে। তাহলে আমি কী ফেল? আমি ফেল না। প্রতিযোগিতায় আমি একজনের থেকে এক নম্বর কম পেয়েছি বলে ৯৯ পেয়েও আমি টিকতে পারিনি, এটা ফেল না।”

নাহিদ দাবি করেন, সার্বিক ক্ষেত্রে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন।

“বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান করে। তারা বলছে, শিক্ষার্থীরা অতি মেধাবী, ভালো করছে, (মান) উন্নত হচ্ছে। তবে যা হওয়া উচিত, তার থেকে অনেক পেছনে আছে। অনেক ভালো করতে হবে সেটা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।”

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমানো এবং শিক্ষার মান বাড়ানোকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এজন্য কারিকুলাম ও পাঠদান পদ্ধতি উন্নত করা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি তুলে ধরেন নাহিদ।