পাসের ভেতর সব ফোকলা: খালেদা

সরকার ‘বাহবা পেতে’ পাসের হার বৃদ্ধি করছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেছেন, এতে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা ‘ধ্বংস হতে’ বসেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2014, 05:35 PM
Updated : 29 Sept 2014, 05:39 PM

রোববার রাতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা বলেন, “এখন পরীক্ষায় নকল হয় না। বাহবা পাওয়ার জন্য তারা পাসের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। আসলে ভেতরে সব ফোকলা।”

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একটি ইউনিটে মাত্র ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর উত্তীর্ণ হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “জিপিএ ফাইভ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করবে কেন? তাহলে তারা কীভাবে জিপিএ ফাইভ পেল?”

গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীন ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় ৯০ শতাংশেরও বেশি পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতেই ব্যর্থ হয়েছে। তাদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগে ভর্তির যোগ্য মাত্র দুজন।

এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই দুষেছেন।

রোববার সচিবালয়ে এক বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, “বাছাই প্রক্রিয়া (ঢাবির) ত্রুটিপূর্ণ ছিল, এজন্য (শিক্ষার্থীরা) ফেল করেছে।”

বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া অবশ্য ভর্তি পরীক্ষার এই ফলাফলের জন্য দায়ী করেছেন সরকারকে। 

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এভাবে সরকার পাসের হার বাড়িয়ে দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর ফলে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা হতাশ হয়ে পড়ছে।”

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা স্মরণে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত  শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শীলানন্দ মহাসেবো, আনন্দ বোধী ভিক্ষু, সুমঙ্গল ভিক্ষু, সুমন রক্ষিত ভিক্ষু, সুনন্দ প্রিয় ভিক্ষু, উদয় কুসুম বড়ুয়া ও মনিষ দেওয়ান তাদের দুর্দশার কথা খালেদা জিয়ার কাছে তুলে ধরেন।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায়ও একই ধরনের ঘটনা ঘটে।

ফেইসবুকে ধর্মীয় অবমাননার ছবি থাকার অভিযোগ তুলে ওই সাম্প্রদায়িক হামলায় রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার পুরোপুরি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ধ্বংস ও লুট করা হয় আড়াইশর বেশি দুর্লভ বৌদ্ধমূর্তি। হামলা হয় বৌদ্ধ বসতিতেও।

ওই ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, “এখনো প্রকৃত অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে সঙ্গী হয়েছে। যারা অপরাধী নয়, তারা কারাগারে আছেন।”

আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও তাদের শাসনামলে কোনো ধর্মের মানুষ ‘শান্তিতে থাকতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির প্রধান, যার দল জামায়াতের জোটসঙ্গী।

তিনি বলেন, “ধর্ম নিরপেক্ষতার মুখোশ পড়ে তারা সব সম্প্রদায়ের মানুষের জমি-জমা দখল, মন্দির-গির্জা, বৌদ্ধ বিহারে হামলা করে।”

পিলখানা হত্যাযজ্ঞের জন্যও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা সব সময় মানুষ মরলে রক্ত দেখলে খুশি হন, আনন্দ পান। তারা শুধু রক্ত চায়, রক্ত চায়। তার সঙ্গে থাকা লোকজনই বইয়ে তা লিখে গেছে।”

হত্যা ও গুমের ঘটনায় র‌্যাবের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন খালেদা জিয়া।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, “আওয়ামী লীগের আমলে কোনো শীর্ষ জঙ্গি ধরা পড়েনি। সব শীর্ষ জঙ্গি আমাদের সময়ে ধরা পড়েছে।”

সব ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা।

তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ। জনগনকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই অবৈধ সরকারকে বিদায় করব।”

ঈদ সামনে রেখে গরুর হাটের ব্যাপক চাঁদাবাজি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা।

তিনি বলেন, “ঘাটে ঘাটে কোরবানির হাটে ক্ষমতাসীনরা চাঁদাবাজি করছে। তাহলে কীভাবে মানুষ কোরবানি দেবে?”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী।

ফ্রন্টের চট্টগ্রাম শাখার আহ্বায়ক সুশীল বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মইন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকারসহ রামুর কয়েকজন বৌদ্ধ ভিক্ষু অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিএনপির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ান, জয়ন্ত কুণ্ডু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।