ষোড়শ সংশোধন: এক মাসের মধ্যে আপিল

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের অধীনে নিতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে আপিল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2016, 11:00 AM
Updated : 24 Oct 2016, 11:00 AM

তিনি সোমবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “জাবেদা নকল পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আমরা আছি। এটা পেয়ে গেলেই আমরা আপিল করব। এক মাসের ভেতরে আমরা হয়ত (আপিল) দাখিল করতে পারব।”

সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকের অপসারণ ক্ষমতা আগের মতো আইনসভার হাতে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন হয়েছিল।

কিন্তু একটি রিট আবেদনে চলতি বছরের ৫ মে দেওয়া রায়ে হাই কোর্ট ওই সংশোধন অবৈধ ঘোষণা করে। তিন বিচারপতির ওই বেঞ্চের রায়টি সংখ‌্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে হয়েছিল।

গত ১১ অগাস্ট দুই বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় বিচারকের রায়ও প্রকাশ পায়।

অ‌্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “হাই কোর্ট বিভাগের দুজন বিচারপতি রায় দিয়েছেন এটাকে অবৈধ ঘোষণা করে, একজন বলেছেন বৈধ।

“এর বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই আপিল বিভাগে আপিল করব। আমরা সর্বোচ্চ আদালতে হাই কোর্টের রায়কে বাতিল অথবা পরিবর্তন করার চেষ্টা করব।”

>> ১৯৭২ সালে মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়।

>> পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়।

>>  ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

>> ষোড়শ সংশোধনীর ৯৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ছাড়া কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না।’

>> ৯৬(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দফা (২) এর অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

>> সেই তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি এবং অপসারণের প্রক্রিয়া ঠিক করে তৈরি একটি আইনের খসড়ায় গত ২৫ এপ্রিল নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম মনে করেন, আপিল বিভাগ তাদের যে নির্দেশনা দিয়েছিল, সেটি ষোড়শ সংশোধনীতে বাস্তবায়িত হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট

“পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে মার্শাল ল অর্ডার দ্বারা যে সমস্ত কার্যকলাপ করা হয়েছিল, সেগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। শুধু বিচারপতি অপসারণের ব্যাপারটা রাখা হয়েছিল, জনকল্যাণমূলক হওয়ার কথা বলে।”

“যখন রায় রিভিউ করলাম, তখন আদালত বললো, সামরিক শাসনামলে যত রায় হয়েছিল সবগুলো অবৈধ এবং সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল যে এই সময় পর্যন্ত এটা বহাল থাকবে। এই রিভিউ রায়ের পরে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা বাহাত্তরের সংবিধানে যা ছিল সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

বর্তমান অবস্থায় কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব কি না- এ প্রশ্নে অ‌্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এখন এ অবস্থাতে ব্যবস্থা নেওয়ার, আমার মতে, অবস্থা নাই।”

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের লোকবল কমানোর পক্ষেও মত জানান মাহবুবে আলম।